ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির আশঙ্কা

আইএনএফ থেকে সরল মস্কো

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৬ মার্চ ২০১৯

আইএনএফ থেকে সরল মস্কো

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তির শর্ত থেকে সরে এসেছে মস্কো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশে স্বাক্ষর করেন। সাবেক সোভিয়েত আমলে ১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আইএনএফ চুক্তি হয়। ক্রেমলিনের জনসংযোগ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, ওয়াশিংটন ওই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করায় মস্কোরও পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে। তাই রাশিয়া এই চুক্তি স্থগিত করতে বাধ্য হলো। এরপর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসার সিদ্ধান্তের কথা ওয়াশিংটনকে জানানোর কথা বলা হয়। এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্মায়ুযুদ্ধকালীন বহুল আলোচিত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনের সরে আসার সমালোচনা করেছে বেজিং। খবর তাস ও প্রেস টিভি অনলাইনের। শনিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং সুয়াং এক বিবৃতিতে আইএনএফ চুক্তি বিষয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার আহ্বান জানান। জেং সুয়াং বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং এই চুক্তির শর্তে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। উভয় দেশ ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত বিষয়ে সতর্ক করে জেং সুয়াং বলেন, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ সময় রাশিয়া ও ইউরোপকে সতর্ক করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এই ঘটনায় নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। ১৯৮৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আইএনএফ চুক্তি কার্যকর হয়। এতে উভয় দেশের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা পাঁচশ কিলোমিটার থেকে একহাজার কিলোমিটারের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্র নানা সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, মস্কো এই চুক্তির শর্ত মানছে না। অবশ্য রাশিয়া বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এই চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর দিন থেকেই তা কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে গত দোসরা ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এক ঘোষণায় বলেন, মস্কোও আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে পুতিন বলেন, রাশিয়াকে তার দেশের অস্ত্রের উন্নয়ন ও অস্ত্র মোতায়েনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তবে যেসব জায়গা সরাসরি হুমকির মধ্যে রয়েছে সেসব জায়গায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, রুমানিয়া ও পোলান্ডে ক্ষেপণাত্র মোতায়েন করে ওয়াশিংটন একতরফা আইএনএফ চুক্তিকে অস্বীকার করেছে। তবে রুশ নেতা পুতিন বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা আশা করছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে আইএনএফ থেকে সরে আসল। আমরাও ইটের বদলে পাটকেল নীতি গ্রহণ করলাম। যুক্তরাষ্ট্র যেমন আইএনএফ স্থগিত করেছে আমরাও একই নীতি গ্রহণ করলাম। যুক্তরাষ্ট্রও যেমন তাদের প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করবে আমরাও ঠিক তাই করব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিন্ধান্তের কথা ঘোষণার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি ন্যাটোতে ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্তের কথা তুলবেন। এর মধ্যে রাশিয়ার অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সামরিক পরিকল্পনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে এই আইএনএফ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
×