ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাসপোর্ট না পাওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক হজযাত্রীর নিবন্ধন অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৬ মার্চ ২০১৯

পাসপোর্ট না পাওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক হজযাত্রীর নিবন্ধন অনিশ্চিত

আজাদ সুলায়মান ॥ নতুন পাসপোর্ট সঠিক সময়ে হাতে না পাওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক হজযাত্রীর নিবন্ধন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নিবন্ধনের প্রাথমিক সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ১০ মার্চ। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে মোট নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ১০ হাজার। ধীরগতির এই অনুপাতে আগামী চারদিনে বাকি সোয়া লাখ হজযাত্রীর নিবন্ধন করার কোন সম্ভাবনা নেই। এতে প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। নতুন পাসপোর্ট পেতে গলদঘর্ম হজযাত্রীগণ। দেড় দু’মাসেও পাসপোর্ট সরবরাহ করতে পারছে না পাসপোর্ট অধিদফতর। ফলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে হজ এজেন্সিগুলো বিপাকে পড়েছে। এ অবস্থায় এজেন্সিগুলোর জোর দাবি-সময় বাড়াতে হবে। হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেছেন, দশই মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়াকারী প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের সিইও বজলুল হক বিশ্বাস জানিয়েছেন, অতীতের মতো এবারও সময় বাড়াতে হবে। তবে এবার যেহেতু বেশিরভাগই নতুন পাসপোর্টের অভাবে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে- সেজন্য জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না। শেষের দিকে চরম চাপের মুখে কাজ করতে হবে। জানা গেছে, প্রতিবছর হজযাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই নতুন পাসপোর্টধারী। যারা হজের প্যাকেজ ঘোষণার পর নতুন পাসপোর্ট তৈরি করতে দেন। গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট হজযাত্রীর শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি পাসপোর্ট করেন হজের মৌসুম সামনে রেখে। বাকিরা পুরানো পাসপোর্টের। সউদী-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী হজে যাবেন। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট পবিত্র হজ হবার কথা। এ হিসেবে এবার বেশিরভাগই নতুন পাসপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু এবার সংকটটা দেখা দিয়েছে পাসপোর্ট অফিসের মূল সার্ভারে যান্ত্রিক ত্রুটিতে। দেশের শীর্ষ হজ এজেন্সি আকবর ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মুফতি লুুৎফুর রহমান ফারুকি জানান, তার এজেন্সির যেখানে দুই হাজারেরও বেশি হজযাত্রীর প্রাক নিবন্ধিত করা রয়েছে, সেখানে একজনেরও নিবন্ধন করা সম্ভব হয়নি গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। এদের বেশিরভাগই নতুন পাসপোর্টের অপেক্ষায়, বাকিরা পাকেজ ঘোষিত টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতায় রয়েছে। কেন এই জটিলতা জানতে চাইলে মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকি বলেন, সরকার একদিকে হঠাৎ স্বল্প সময়ের মেয়াদে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, অন্যদিকে নতুন পাসপোর্ট অফিসে মেশিন নষ্ট হওয়ায় যথা সময়ে পাসপোর্ট সরবরাহ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সময় মতো পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় অধিকাংশ হজযাত্রীই নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন না। মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন হয়েছে ৪ হাজার ৫শ’ হজযাত্রীর এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন হয়েছে ৫ হাজার ৮১৮ জন হজযাত্রী। সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের সময়সীমা মঙ্গলবার শেষ হলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় অন্তত চলতি মার্চ মাস পুরোটা জুড়েই নিবন্ধন করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে শৃঙ্খলা বজায় রেখে সুনামের সঙ্গে এজেন্সিগুলো সবার নিবন্ধন কাজ শেষ করতে সক্ষম হবে। আকবরী ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে তিনি হজযাত্রীদের পাসপোর্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সমস্যায় রয়েছেন জাবালে নূর ট্রাভেলসের দুই শতাধিক হজযাত্রী। যাদের মধ্যে মাত্র ৫০ জনের পাসপোর্ট হাতে পাওয়া গেছে। জাবালে নূর ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি জুনায়েদ গুলজার বরিশালে গেছেন হজযাত্রীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে। কোবা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাওলানা মাহমুদুর রহমান জানান, নওগাঁ-এর হজযাত্রী আলী হোসেন, খোরশেদ আলম, শাহারা ভানু, নার্গিস আরা এবং রাঙ্গামাটির হজযাত্রী আব্দুল হাই সেলিম গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি পাসপোর্ট পাচ্ছে না। আবাবিল হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ আবু ইউসুফ জানান, টাঙ্গাইলের হজযাত্রী হাবিব উল্লাহ, জামালপুরের হজযাত্রী মাওলানা আবু খালেদ, বগুড়ার হজযাত্রী মাওলানা আব্দুর রউফ, পাবনার মাওলানা হানিফ, যশোরের আশেক এলাহী, ফেনীর মাওলানা জালাল, চট্টগ্রামের হাফেজ হোসাইন, কুমিল্লার মাওলানা আব্দুর রহমান ও বরিশালের মাওলানা মশিউর রহমান বিগত দু’মাসেও পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় নিবন্ধন কার্যক্রম করতে পারেননি। জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনার হজ নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারী কোটার সাত হাজার ১৯৮ জন পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধনের ২২ হাজার ৭৬৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত হজ যাত্রীদের নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাক-নিবন্ধনের ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৫ নম্বর ক্রমিকের মধ্যে থাকা হজযাত্রীরা আর সুযোগ পাবেন না। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট ক্রমিকের মধ্যে থাকা প্রাক-নিবন্ধিতরা যথাসময়ে হজ নিবন্ধন সম্পন্ন না করলে তারা এ বছর হজ পালনে আগ্রহী নন মর্মে বিবেচনা করে পরবর্তী ক্রমিকের প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানানো হবে। জানতে চাইলে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, প্রতিবছর প্রথম দিকে কিছুটা গতি কম থাকে। নিবন্ধনের ঘোষণার পর হজযাত্রীদের টাকা সংগ্রহ করতে কিছুটা সময় লাগে। এরপর শেষ দিকে গতি অনেক বেড়ে যায়। আশাকরি সময়মতো হজযাত্রীরা নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছরের ১০ আগস্ট সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। বাংলাদেশের ৫ দাবি মেনেছে সৌদি আরব ॥ এদিকে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি নিয়ে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে দাবি করে আসছে সৌদি সরকারের কাছে। গত সপ্তাহে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফরের সময় এসব দাবি মানার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি আরবের হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বিনতান ধর্মমন্ত্রীকে এ বিষয়ে জোর আশ্বাস দিয়েছেন। জানা গেছে, উত্থাপিত পাঁচটি বিষয় ছিলÑ বাংলাদেশী বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোর হজযাত্রী সংখ্যা ন্যূনতম ১৫০ জন থেকে ১০০ জনে নামিয়ে আনা, মক্কা, মিনা ও আরাফাতে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের উন্নতমানের পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা, মিনায় দ্বিতলবিশিষ্ট খাটের ব্যবস্থা না করা, সৌদি আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশে হজযাত্রীদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা এবং বাংলাদেশের জন্য আরও দুই হাজার হজযাত্রীদের কোটা বৃদ্ধি করা। বৈঠক সৌদি হজমন্ত্রী এসব বিষয় ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং সুপারিশগুলো নিজ দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দেন। এর আগে হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মিনায় দ্বিতল খাটের ব্যবস্থা করছে সৌদি সরকার। সেটি বাস্তবায়ন হলে প্রত্যেক হজযাত্রীকে আরও ৪-৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হাব মহাসচিব এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর সর্বনিম্ন সংখ্যা ১০০ করার বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্মতি জানিয়েছে। মিনায় দ্বিতল খাটের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
×