ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৬ মার্চ ২০১৯

উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ মার্চ। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালায়। কোন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার ঢাবি ক্যাম্পাস এক নতুন উৎসবমুখর পরিবেশের রূপ দেয়। মঙ্গলবার সকাল এগারোটা থেকেই কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, মধুর ক্যান্টিন, মল চত্বরসহ কার্জন হল এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারে অংশ নিতে দেখা যায়। ছাত্র সংগঠনগুলো ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের উপস্থাপন করছেন। প্রথমদিনের মতোই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ছাত্রদল প্রথম দিনের মতো লিফলেট হাতে নিয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছে। অবশ্য ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউই বয়সের বাধার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। সারাদিনই ক্যাম্পাসে প্রচার চালিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সমর্থিত রাশেদ-নুরু-ফারুক পরিষদ। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদেরও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হতে দেখা যায়। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ডাকসু নির্বাচনের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীর পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগ এসেছে ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে জিএস প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করছি। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের ইশতেহারে মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে সব সঙ্কট রয়েছে সেগুলোকেই গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা চাই ডাকসু নির্বাচনের পরেও ক্যাম্পাসে এ ধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি তেমনি তাদের মধ্যে ভীতিও কাজ করছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভোট হবে কি না এই শঙ্কা রয়ে গেছে। ইশতেহারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সঙ্কট, আধুনিককালের লাইব্রেরি, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বাইরের যানবাহন বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থার বিষয়গুলো ইশতেহারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ॥ ডাকসু নির্বাচনের প্রচারে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর নেতৃত্বে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদের চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসুর রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন। তবে এ বিষয়ে জানতে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ৩(ক) ধারায় বলা হয়, কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাদান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারে কোন ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিক্সা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি নিয়ে কোনরূপ শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না। ডাকসুর নির্বাচনে ভিপি পদপার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, এটি কোন ব্যান্ড পার্টি নয়। এটি আমাদের নিজস্ব গান। এটি মূলত গানের মিছিল ছিল। একটি প্যাড ড্রাম ছিল যেটি সংগঠনের একজন কর্মী দিয়েই বাজানো হয়েছে। গানের তালে তালে গানের মিছিলের প্রোগ্রাম ছিল। শোভন এদিকে স্যার এ এফ রহমান হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী আবদুল আলীম খানের বিরুদ্ধে তারই প্রতিদ্বন্দ্বীর হল আঙিনায় টাঙ্গানো ব্যানার নামিয়ে ফেলার অভিযোগ এসেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উক্ত হল সংসদ নির্বাচনের আরেক ভিপি পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা শোভন এ অভিযোগ করেন। ভিপি পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা শোভন বলেন, প্রচারের অংশ হিসেবে আমি মঙ্গলবার সকালে একটি ব্যানার ক্যান্টিন বয়দের সহায়তায় হল আঙিনায় টাঙ্গাই। টাঙ্গানোর একটু পরেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলীম খানের নির্দেশে ক্যান্টিন বয় আমার ব্যানারটি নামিয়ে ফেলে। এ সময় তিনি টাঙ্গানো ব্যানারের জায়গায় নিজের ব্যানার স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান। ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০১৯ আচরণ বিধিমালা -এর ৫ (ক) এবং (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে শুধু সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করার ক্ষেত্রে। সেখানে ব্যানার টাঙ্গানোর ক্ষেত্রে কোন অনুমতির বিষয়ে বলা হয়নি। এছাড়া ৫(ঝ) তে বলা আছে, প্রতিপক্ষের সভা/সমাবেশ, শোভাযাত্রা এবং অন্য প্রচারাভিযান ব্যাহত বা প- হতে পারে বা গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়াও ৫ (ঞ) তে উল্লেখ আছে, কোন সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধাদানকারী বা গোলযোগ সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অভিযোগের বিষয়ে সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদ মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী আবদুল আলীম খান বলেন, হলে ব্যানার স্থাপনের জায়গা কম, তাই ওই জায়গায় ব্যানার স্থাপনের জন্য হল রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছিলাম। স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যানার স্থাপনের জন্য আচরণবিধিতে কোন বাধা নিষেধ নেই। সেক্ষেত্রে ব্যানার টাঙ্গানোর জায়গা বরাদ্দের জন্য আবেদন করার তো প্রশ্নই আসে না। আমাদের কাছে এ ধরনের আবেদন আসেনি।
×