ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মরছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

হালদা দূষণমুক্ত হচ্ছে না, মাছ নিধনও থেমে নেই

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৫ মার্চ ২০১৯

হালদা দূষণমুক্ত হচ্ছে না, মাছ নিধনও থেমে নেই

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের একমাত্র আঁধার চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার বুক চিরে থাকা হালদা নদী। এই নদী বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটা নদী। যেখান থেকে সরাসরি রুইজাতীয় মাছের ডিম সংগৃহীত হয়। প্রতিবছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এই হালদায় রুইজাতীয় মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। প্রকৃতির অপার জীববৈচিত্র্যময় ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এই নদী যুগ যুগ ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে যে অবদান রাখছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ নদীকে দূষণ, দখল এবং মা মাছ মারা নিধনে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন নিয়ম কানুন আরোপিত হলেও তা কোন না কোনভাবে অকার্যকরই রয়ে যায়। সোমবারও মরে ভেসে উঠেছে ১২ কেজি ওজনের একটি কাতল ও ৪ কেজি ওজনের আইড় মাছ। সঙ্গে আরও কম ওজনের বিভিন্ন মৎস্য প্রজাতি। স্থানীয়রা অভিযান চালিয়ে হালদার মোহনা, ছায়ারচর ও মদুনাঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে প্রায় ১০ হাজার মিটার ভাসা ও ঘের জাল। বর্তমানে সারাবছর এই নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল এবং ড্রেজারে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম মানা হয় না। এছাড়া এ নদীতে দূষণও অব্যাহত রয়েছে। নগরীর অক্সিজেন এলাকা ও আশপাশের বর্জ্য সরাসরি ব্রাহ্মণশাহী ও খন্দকিয়া খাল হয়ে এ নদীতে পড়ছে। এছাড়া একটি পেপার মিল ও হাটহাজারীতে ১শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার পিকিং থেকে বর্জ্যও পড়ছে এ নদীতে। হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, ডিম সংগ্রহের মওসুম সমাগত। ঠিক এ সময়ে এই নদীতে ইঞ্জিনচালিত জলযান যেমন চলছে তেমনি নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে উঠানো হচ্ছে বালু। নৌকার ইঞ্জিনের পাখা ও ড্রেজারের আঘাতে মা মাছ প্রায়শ মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ সোমবারও ১২ কেজির কাতলা ও ৪ কেজি ওজনের দুটি আইড় মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এ দুটি মাছকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে রাখা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়তে আসে। যা দেশের অন্য নদী থেকে আলাদা। হালদা নিয়ে গবেষকদের মতে, এর বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক। পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ী ক্রিক থেকে সৃষ্ট হালদা ছড়া থেকে হালদা নদীর উৎপত্তি। হালদাছড়ি মানিকছড়ি উপজেলার মানিকছড়ি খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে হালদা খাল এবং ফটিকছড়ির ধুরং খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে পরিণত হয়েছে হালদা নদী। এ নদী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও এবং কালুরঘাট এলাকায় এসে মিলিত হয়েছে। এ নদীতে ডিম সংগ্রহের কৌশল সম্পূর্ণ স্থানীয়। বংশপরম্পরায় ডিম সংগ্রহকারীরা স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে এ নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে থাকে। ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু, রেণু থেকে পোনা এবং সবশেষে পরিণত হয় মাছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হালদা নদী থেকে সংগৃহীত রেণু জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এছাড়া এ নদী থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিনি ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে তা শোধনের পর শহর এলাকায় সরবরাহ করে আসছে।
×