ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সনদ থাকলেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৫ মার্চ ২০১৯

সনদ থাকলেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ৪ মার্চ ॥ রায়পুরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থেকেও গত ৪৮ বছরে ওয়াজ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ বৃদ্ধ অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত বুধবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, আদর্শের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্তরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ উপজেলায় যুদ্ধ করি। ভারত অম্পিনগর ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং শেষে মৌলভীবাজার সেক্টর নং-৩ এর অধীনে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মরহুম মোখলেছুর রহমান কমান্ডারের নেতৃত্বে বিজয়াবধি যুদ্ধ করে যাই। গত ৪৮ বছরেও আমি মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ থেকেও স্বীকৃতি পাইনি। বর্তমানে ৩ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে করুণ জীবনযাপন করছি। মৃত আছিম উদ্দিনের ছেলে ওয়াজ উদ্দিনের যুদ্ধকালীন ঠিকানা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, পাত্রখোলার তাহেরা চা বাগানে ছিল এবং সেখানে বসবাস করছেন বলে জানান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সেখানে আশ্রয়হারা হয়ে এক আত্মীয়ের আশ্রয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা কেরোয়া ইউনিয়নের দুলা মিয়া মোল্লাবাড়ীতে অভাবকে সঙ্গী করে জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানের ঠিকানাই তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধিত হয়। ওয়াজ উদ্দিন বলেন, অনেক শ্রমের বিনিময়ে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী কর্তৃক সাময়িক সনদপত্র পেয়েছেন। এমনকি তিনি মৌলভীবাজারে মুক্তিযুদ্ধের গেজেট তালিকায় ১১০৫নং ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে আব্দুল মান্নান (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৭৯), আঃ হামিদ (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৬৬), রফিক মিয়া (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৯৯) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা আমাকে সহ-মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করেছেন। একাত্তরের পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জে যুদ্ধকালীন মৌলভীবাজার কমান্ডার মরহুম মোখলেছুর রহমানের অধীনে থেকে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধ শেষে গ্রুপ কমান্ডার আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে অস্ত্র জমা দেন। যার সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমান্ডার কুমুল রঞ্জন দেব ওয়াজ উদ্দিন কে শনাক্ত করণ নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, বর্তমানে মৌলভীবাজারের মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মমিন বলেন, ওয়াজ উদ্দিনকে আমি চিনি, উনি তাহেরা চা বাগানে ছিলেন, তবে তার বিষয়ে কাগজপত্র না দেখে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৭০) বলেন, আমার স্বামী মৌলভীবাজারে বিভিন্ন উপজেলায় ও এলাকায় যুদ্ধ করেছেন, অথচ যারা যুদ্ধ করেনি এমন অনেক ব্যক্তি সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধাতো পাচ্ছেই সঙ্গে তাদের সন্তানরাও সুবিধা ভোগ করছে। আমার স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে কমান্ডারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে একাধিকবার গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছি। সবাই মোটা অঙ্কের টাকা চাচ্ছে, টাকা দিলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম হবে ও গেজেট প্রকাশ হবে বলে আশ^াস দিচ্ছে। বর্তমানে আমি ও আমার অসুস্থ স্বামী এবং বেকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। আমি চাই আমার স্বামীর মৃত্যুর আগে তার সকল মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার স্বামীকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবেন। বর্তমানে অসুস্থ স্বামীর খরচ চালাতে আমি খুব হিমশিম খাচ্ছি, তার পাশাপাশি বেকার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছি।
×