ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাব্য হারানো নদী ফিরে পাবে নতুন জীবন

মহানন্দা খনন শুরু

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৫ মার্চ ২০১৯

মহানন্দা খনন শুরু

ডি এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ মহানন্দা নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। মহানন্দা খননের মাধ্যমে এর নাব্য ফিরিয়ে আনা হবে। এই নদী প্রবেশ করেছে ভোলাহাট উপজেলার মধ্য দিয়ে। এটি খনন হলে নাব্য হারানো নদী ফিরে পাবে নতুন জীবন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র নিশ্চিত করেছে মহানন্দা নদীর প্রায় ৯৫ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সংবলিত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আইডব্লিওএমকে পরামর্শক নিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেচ কাজ সম্পন্ন হওয়া মাত্র একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হবে। ৩২৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই রাবার ড্যামটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ রাবার ড্যাম। ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। যা বেড়ে দুইশ কোটিতে পৌঁছবে। পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণের লক্ষ্যে গাণিতিক মডেল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বরাদ্দ অর্থ একনেকে পাস করা হয়েছে। মহানন্দা নদীর উভয় তীরে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। সমগ্র কারিগরি পরিবেশগত, আর্থ-সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়ে শহরের অদূরে একটি চিত্তাকর্ষক বিনোদন স্পট তৈরির কথা মাথায় রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মহানন্দার আশপাশের প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি কাজ এবং আমের বাগানের পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এ ছাড়াও বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর ধরে রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রাবার ড্যামের মাধ্যমে সৃষ্ট জলাধারকে চাঁপাই শহরের চলমান পানি শোধনাগার উৎস হিসাবে ব্যবহার হবে। রাবার ড্যামটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর সংলগ্ন শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ সেতুর উজানে নির্মাণের কারণে সেচ প্রকল্প নতুনভাবে চালু হবে। ড্যামের ভাটিতে ১৫ কিলোমিটার পার হয়ে মহানন্দা-পদ্মায় গিয়ে (গঙ্গা) পড়বে। ফলে ড্যামবহির্ভূত ভাটির ১৫ কিলোমিটার জুড়ে নদীর দুই ধারের সেচ প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে উপকৃত হবে। ড্যমটি লম্বায় ৩২৬ মিটার ও উপরের স্তর ৩৫৩ মিটার হবার কারণে মাছ চাষীরা বড় ধরনের সুবিধা পাবে। নদী ধার সংলগ্ন খাল, বিল ও একাধিক পুকুর বছরে অতিরিক্ত ৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার মাছ চাষ হবে। পৌরসভায় প্রতি ৬ ঘণ্টায় ৭৭ হাজার গ্যালন বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে ড্যামের কারণে। এছাড়াও মহানন্দা সেতু থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত দুই কিলোমিটার নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণের ফরে জনসাধারণ প্রাতঃভ্রমণে বাড়তি সুযোগ পাবে। এছাড়াও পাউবোর বারঘরিয়া থেকে খালঘাট পর্যন্ত বাধটি সংস্কার করা হলে শহরের জনসাধারণ একটি বড় বিনোদন কেন্দ্র পাবে। পাশাপাশি একই সঙ্গে ভোলাহাট, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, নাচোল, সদর এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার আংশিক এলাকার জনসাধারণ দারুণভাবে উপকৃত হবে। বিধায় বর্তমানে নদীর নব্য ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং ও পরবর্তীতে রাবার ড্যাম নির্মাণে জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও আর্থিক সুবিদা অর্জন বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। কিশোরগঞ্জে খাল নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, হাওড় অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম উপজেলার কাস্তুল টিআইপি দিয়ারা খালটি দীর্ঘদিন আগে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। খালে পানি না থাকায় গত ৬-৭ বছর ধরে দুই পাড়ের প্রায় দুই হাজার একর ফসলি জমিতে সেচ দেয়া নিয়ে সঙ্কটে ছিলেন কৃষক। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বসানো হয় ১০০টিরও বেশি অগভীর নলকূপ। এসব অগভীর নলকূপের মাধ্যমে এতদিন সেচ সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করে আসছিলেন কৃষক। এ অবস্থায় খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ নিয়েছে বিএডিসি। ইতোমধ্যে চার কিলোমিটারের এই খালটির প্রায় ৫০ ভাগ পুনর্খননের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশ পুনরর্খননের কাজও অব্যাহত রয়েছে। ফলে জমিতে সেচ নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে কৃষকের। সংশ্লিষ্টরা জানায়, টিআইপি দিয়ারা খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় দুই পাড়ের জমিতে সেচের পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে আসছিল। খালটি পুনর্খনন শুরু হওয়ায় এখন আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। পুনর্খননের কাজ শেষ হলে হাওড়ের প্রায় দুই হাজার একর সেচের জমির ফসল রক্ষা পাবে। দুই পাড়ের জমিতে খালের পানি দ্বারা সেচ প্রদান করা সম্ভব হবে। এছাড়া খালটি খনন হলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার না করে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ২০-২৫টি এলএলপি চালু আছে। খাল খনন সম্পন্ন হলে ৬০টিরও বেশি এলএলপি চালু করা যাবে। এর বাইরে খনন করা খালের মাটি খালের দুই পাড়ে ফেলে রাস্তা (গোপাট) তৈরি হলে হাওড়ের ফসল পরিবহনেও সুফল পাবেন কৃষকরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ময়মনসিংহ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলম বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে টিআইপি দিয়ারা খালটি পুনর্খননের পদক্ষেপ নেন। খালটির পুনরর্খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ২৮০ টাকা। ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প (এমডিএমআইডিপি) এর আওতায় ধলেশ্বরী নদী থেকে ধোপাবিল পর্যন্ত চার কিলোমিটার সেচ প্রকল্পটির প্রস্থ ১২ মিটার করে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ৯০ দিনের কর্মসূচীতে খালটি পুনর্খনন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই পুনর্খনন কাজের ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি খাল পুনর্খননের কাজ পরিদর্শন শেষে উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা রওনক জাহান কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলম জানান, বিএডিসি সবসময় কৃষকদের স্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
×