ফিরোজ মান্না ॥ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে ‘এক্টিভিটি প্লান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মাইগ্রেশন মেনেজমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি ’২১ সাল পর্যন্ত এক সঙ্গে কাজ করবে। দক্ষ জনশক্তি রফতানি হলে প্রবাসী আয় অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, প্রায় কোটি মানুষ বিদেশে চাকরি করে যত রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বিদেশী দক্ষকর্মীরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডিজি সেলিম রেজা সম্প্রতি বলেন, একজন দক্ষ কর্মীকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমেই এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে। ওই কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সঠিক ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের কর্মদক্ষতা যাচাই করে পাঠানো হবে। দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করা হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়নে কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত, তারা যাতে সবাই ‘এফেক্টিভ’ পন্থায় কাজ করতে পারে, সেজন্য একটি জাতীয় সংস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। উন্নত বিশ্বে পাঠাতে হলে প্রথম কাজই হলো কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন। কর্মীদের ভাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই কেবল তা করা সম্ভব হবে। তারা যদি দক্ষ হন তাহলে বিদেশে বেতনও বেশি পাবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, প্রতিবছর দেশ থেকে ৮ থেকে ৯ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশের চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষতার অভাবে তারা অনেক কম বেতনে চাকরি করছেন। অথচ অন্যদেশের কর্মীরা দক্ষতার কারণে বেশি বেতন পাচ্ছেন। দেশের প্রায় এক কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করলেও রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে না। প্রতিবছরে রেমিটেন্স এসেছে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অদক্ষ জনশক্তি রফতানির কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ দিনে দিনে নেমে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে বিদেশী ৫ থেকে ৬ লাখ দক্ষ জনশক্তি কাজ করছেন। তারা প্রায় সমপরিমাণ অর্থ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মন্ত্রণালয় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আইওএমের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে প্রবাসে শুধু কর্মী সংখ্যাই বাড়ছে, রেমিটেন্স বাড়ছে না। ওসব অদক্ষ কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের টাকা। তারা বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকা তারা বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না। এর মধ্যে ওই কর্মীর কাজ করার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। পরে বাড়তি কিছু টাকা আয়ের আশায় তারা অবৈধ হয়ে লুকিয়ে কাজ করে। পুলিশী ভয় সারাক্ষণ মাথায় নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। কেউ আবার পুলিশের হাতে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলখানায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। দালালদের লোভনীয় প্রস্তাবে অনেক বাংলাদেশী কোন ধরনের কাজ ছাড়াই বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজার হারাতে হতে পারে।
সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আগে জাপান অদক্ষ কর্মী নিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ‘টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের’ (টিআইটিপি) আওতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইনটার্ন গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বাধিক টেকনিক্যাল ইনটার্ন নিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশ থেকে নেয়া শিক্ষানবিস কর্মীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেবে। পরে তারা দেশে ফিরে নিজেই উদ্যোক্তা হতে পারবেন।
