ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সাময়িক বাতিল প্রার্থীদের ভিসির কাছে আবেদন

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১ মার্চ ২০১৯

ডাকসু ও হল সংসদ  নির্বাচনে সাময়িক  বাতিল প্রার্থীদের  ভিসির কাছে  আবেদন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে সাময়িকভাবে বাতিল হওয়া প্রার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। তবে তারা পরিকল্পিতভাবে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে দাবি করছেন। অন্যদিকে ভোটার তালিকায় নাম নেই এমন অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার জন্য উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন বামজোট প্যানেলের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানসহ ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া পাঁচজন প্রার্থী। বুধবার প্রকাশিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় ভোটার তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগে নাম আসেনি উম্মে হাবিবা বেনজীরের। ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এই সভাপতি বাম জোটের প্যানেল থেকে জিএস পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। তার প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদে দুপুর ১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সম্র্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য। লিখিত বক্তব্যে ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক বলেন, উম্মে হাবিবা বেনজীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও ভোটার তালিকায় নাম না ওঠার ঘটনা থেকে বুঝা যায়, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবেই বেনজীরের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এ সময় তিনি প্রার্থিতা ফিরিয়ে না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, প্রগতিশীল জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবীর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফুর রহমানের প্রার্থিতা ‘তথ্যে অসম্পূর্ণতার’ কারণ দেখিয়ে সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়। তিনি সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে ডাকসুর জিএস পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে তিনি উপাচার্যের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বুধবার প্রার্থিতা ঘোষণার সময় সংবাদ সম্মেলনে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নীল নক্সার নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই নীল নক্সার অংশ হিসেবে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার আবেদন করে যদি সুবিচার না পান তাহলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান তিনি। ভোটার তালিকায় নাম নেই, অথচ প্রার্থী ॥ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবেন। তবে অনেকক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনেই প্রাথমিক প্রার্থীদের তালিকায় নাম এসেছে অনেকের। ছাত্রত্ব না থাকলেও ভোটার তালিকায় নাম আসার অভিযোগ পাওয়া যায়। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের ভিপি ও এজিএস পদে নির্বাচন করছেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতকত্তোর পাস করা সাইফুল্লাহ আব্বাসী ও সুরাপ মিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে তাদের মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তারা দুইজনেই ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে হল সংসদে নির্বাচন করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার আগে যদি কোন ছাত্রের ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে ছাত্রত্ব শেষ হয়, তবে তারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবে না। তবে এই দুই প্রার্থীর ছাত্রত্ব না থাকলেও বৈধ ভোটার তালিকায় নাম দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর ২০ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুরাপ মিয়া বলেন, যেহেতু হলের আইডির কার্ডের মেয়াদ আছে, সে অনুযায়ী আমি ভোটার ও প্রার্থী হতে কোন সমস্যা নাই বলে মনে করি। এদিকে শামসুন নাহার হলের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিলের শিক্ষার্থী নিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৭৩৭ জন। তবে এই তালিকায় নাম নেই ডাকসুর সদস্য পদে ছাত্রলীগের প্যানেলে থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেত্রী নিপু ইসলাম তন্বী। ডাকসু নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকায় তার নাম ভোটার নম্বর হল ৩৭৩৮। ২০১১-১২ সেশনের এই ছাত্রী শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকিং এ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধীনে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়। যদিও গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তার নাম আসেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে হ্যাঁ বা না বলা যাবে না। কারও প্রার্থিতা নিয়ে অভিযোগ থাকলে আজ (বুধাবার) পর্যন্ত আপীল করার সুযোগ ছিল। এটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না। আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করব। ৯ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল ঘোষণা স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ‘বুথ সংখ্যা’ নিয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে স্বাধিকার স্বতন্ত্র প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৮টি হলের ৪২ হাজার ৯০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আগামী ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ৬ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলবে। তাদের দাবি সময় কম হওয়ায় প্রত্যেকটি হলে বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা দুপুর ২টার মধ্যে ভোটদান সম্পন্ন করতে পারবে। তারা হলগুলোর শিক্ষার্থীদের অনুপাতে বুথ রাখার প্রস্তাবনা দিয়েছে। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রস্তাবনা পেশ করেন। একই সময় তারা স্বাধিকার স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা পড়ে শোনান এই প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আবু রায়হান।
×