ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির মতবিনিময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের অভিযোগ

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে অনিয়মই নিয়ম

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১ মার্চ ২০১৯

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে অনিয়মই নিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলায় দুর্নীতি ও অনিয়মের শীর্ষে অবস্থান করছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। দুর্নীতি আর অনিয়মই এখানকার নীতি-নিয়ম। এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন মাদারীপুর জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা। বুধবার বিকেলে মাদারীপুর নতুন শহরের টিআইবি কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করা হয়। জেলার গণমাধ্যম কর্মীরা মাদারীপুর সদর হাসপাতালের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে টিআইবিকে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় আলোচনা হয় সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে। আলোচনায় উঠে আসে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীদের দুর্ভোগের কথা। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেক রোগী শুধু সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকারই হচ্ছে না-তা নয়। কেউ কেউ নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন হাসপাতালের স্টাফ ও দালালদের কাছে। অথচ এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের; তাদের কোন মাথাব্যথা নেই এমন মন্তব্য করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। এ সময় আলোচনা সভায় টিআইবির মাদারীপুর জেলার সভাপতি খান মোঃ শহীদ, শাহানা নাসরিন রুবী, মমতাজ হক, ইয়াকুব খান শিশির, এনায়েত হোসেন নান্নু, এম.আর. মর্তুজাসহ অন্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য থেকে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে সরকারীভাবে যে পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ থাকার কথা সে পরিমাণ ওষুধ নেই। যাও বা আছে রোগীরা তা পাচ্ছেন না ঠিক মতো। শুধু ওষুধ নয়, ২৪ ঘণ্টা গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি করার কথা থাকলেও গর্ভবতী মায়েরা এ সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র দু’তিন ঘণ্টা। ফলে সরকারী হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েরা সেবা বঞ্চিত হয়ে বাধ্য হচ্ছেন ক্লিনিকে যেতে। এতে কখনও কখনও নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া রোগীদের অন্য চিকিৎসাসেবায়ও অবহেলার অভিযোগ মিলছে বারবার। সাধারণত ছোট-খাটো ভাঙ্গাচূড়া রোগীর ড্রেসিং করতে লম্বা স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয় রোগীর স্বজনের হাতে। হাসপাতালের পাশের ফার্মেসি থেকে এ সব চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এমন কিছু রোগী হাসপাতালে নেয়া হয় যাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া এখানেই সম্ভব। কিন্তু দায় এড়াতে সে সব রোগীকে রেফার করা হয় ঢাকা, ফরিদপুর অথবা বরিশালে। এদিকে সরকারী এ্যাম্বুলেন্সে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে মতবিনিময় সভায়। হাসপাতালের একমাত্র জেনারেটরটিও অযতœ-অবহেলায় ধ্বংসের পথে। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও নোংরা পরিবেশ তো হাসপাতালের নিত্যসঙ্গী। মতবিনিময় সভায় ডিবিসি নিউজ এর মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি মনির হোসেন বিলাস বলেন, ‘সদর হাসপাতালে রোগীরা কি কি ওষুধ পেতে পারেন তার বিস্তারিত বর্ণনা সিটিজেন চার্টারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ সরকারী হাসপাতালে যে সেবাটুকু পাওয়ার কথা তাও পাচ্ছে না।’ দৈনিক খবরের জেলা প্রতিনিধি আক্তার হোসেন বাবুল বলেন, ‘সদর হাসপাতালের আরএমও দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে ও একই পদে বহাল থাকায় এই দুর্নীতি ও অনিয়ম থামছে না। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।’ দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি এ্যাডভোকেট আবুল হাসান সোহেল অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শশাঙ্ক ঘোষ নিয়ম অনুযায়ী সর্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও তিনি তা থাকেন না। তিনি আলাদাভাবে বিভিন্ন স্থানে রোগী দেখছেন, যা নিয়মবহির্ভূত।’ এটিএন নিউজের মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘হাসপাতালে দিনের বেলায় কিছু পরিমাণ ওষুধ দেয়া হলেও রাতের বেলায় তা দেয়া হচ্ছে না। ফলে বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয় করে আনতে গিয়ে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হয়।’ গণমাধ্যম কর্মীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) মাদারীপুরের সভাপতি খান মোঃ শহীদ বলেন, ‘সদর হাসপাতালের এসব বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যাতে শীঘ্রই এই অবস্থার পরিবর্তন হয়।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ফরিদ হোসেন মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রোগীদের ঠিকঠাক মতো চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালেও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। নিয়ম মেনেই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।’
×