ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো ট্রাম্প উন বৈঠক

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১ মার্চ ২০১৯

চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো ট্রাম্প উন বৈঠক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠক কোন চুক্তি সম্পাদন ছাড়াই শেষ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় শীর্ষ নেতা কিম জং উনের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় মুখোমুখি বৈঠক। এ বৈঠক কোন চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। খবর বিবিসির। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘এবার কোন চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে আরও বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে’। ভিয়েতনামের এ শীর্ষ সম্মেলনেই যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে একটি চুক্তির ঘোষণা দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে। উন বলেছেন, হ্যানয়ে তার উপস্থিতিই প্রমাণ করে তিনি ‘নিরস্ত্রীকরণে ইচ্ছুক’। তিনি আরও বলেন ‘যদি আমি না চাইতাম, আমি কখনই এখানে আসতাম না’, বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন উত্তরের এ শীর্ষ নেতা। তার এ ভাষ্যের প্রশংসা এসেছে ট্রাম্পের কাছ থেকেও। তিনি বলেন, ‘আপনাদের শোনা সম্ভবত এটিই সবচেয়ে সেরা জবাব’। উত্তর কোরিয়াকে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে একতরফাভাবে সব পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগের শর্ত দিয়েছিল ওয়াশিংটন। পিয়ংইয়ং যে এ শর্তে রাজি নয়, তা এবারের সম্মেলনেও ফের স্পষ্ট হলো। গত জুনে সিঙ্গাপুরে হওয়া প্রথম শীর্ষ বৈঠকের পর ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া নিয়ে তার প্রশাসনের সফলতা ও অগ্রগতির কথা বারবার বলে আসছেন। এবারের সম্মেলনের আগে অবশ্য তিনি অন্যদের প্রত্যাশায় লাগাম টেনেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রতি তার ‘ব্যাপক শ্রদ্ধা’ আছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘সত্যিকারের চুক্তি’ চান। তিনি বলেন, ‘একদম শুরু থেকেই বলে আসছি- গতি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোন রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা হচ্ছে না, এতেই আমি খুশি’। এর আগে বুধবার ভিয়েতনামে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে ট্রাম্প ও উনের নৈশভোজের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হোয়াইট হাউসে চারজন সাংবাদিক বাধাপ্রাপ্ত হন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গ ও লস এঞ্জেলস টাইমসের ওই চার সাংবাদিক হোয়াইট হাউসের প্রেস পুলের সদস্য ছিলেন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সব ধরনের সফরের তথ্য সংগ্রহের অধিকার রাখেন। ডিনারের সংবাদ সংগ্রহে বাধা পাওয়ার আগে মঙ্গলবার রয়টার্স ও এপির দুই সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রেস পুলের সদস্যরা প্রায়ই ট্রাম্প ও তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতাদের উদ্দেশে জোরে জোরে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে থাকেন। বুধবারও তারা দুই দফা ‘পুল স্প্রেতে’ ভিয়েতনামে মার্কিন-উত্তর কোরিয়া শীর্ষ সম্মেলন এবং মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শীর্ষ সম্মেলন বা বৈঠকের বিভিন্ন পর্যায়ে ছবি তোলার সময়টি ‘পুল স্প্রে’ নামে পরিচিত। চার সাংবাদিককে পরে ট্রাম্প-উনের ডিনার কভারে বাধা দেয়া হয়। আগের দফা পুল স্প্রেগুলোতে জোরে প্রশ্ন করায় যে সংবেদনশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়, তার কারণেই এ বাধা দেয়া হয়েছে বলে সারাহ স্যান্ডার্স জানান। গত জুনে সিঙ্গাপুরে দু’নেতার প্রথম সাক্ষাত এবং হাত মেলানোর সময় হোয়াইট হাউস প্রেস পুলের সফরকারী দলের সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়ে রয়টার্সের সাংবাদিক জেফ ম্যাসন ট্রাম্পের কাছে জানতে চান সম্মেলন থেকে কি অর্জন করতে চান এবং উত্তর কোরিয়ার নিরস্ত্রীকরণ দাবি থেকে তিনি পিছিয়ে আসছেন কি না তা জানতে চান। দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ‘না’ বললেও প্রথম প্রশ্নের বিস্তৃত উত্তর দেন। এরপর এপির সাংবাদিক জনাথন ল্যামি ট্রাম্পের কাছে কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির ঘোষণা আসবে কি না, তা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখছি।’ ভারত-পাকিস্তান সঙ্কট অবসানের আশা ট্রাম্পের ॥ পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া উত্তেজনা নিরসনের ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি। খবর সিএনএন, ডন ও এনডিটিভির। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে ভারতীয় বাহিনীর অন্তত ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়। পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ওই হামলা সংঘটিত হয়েছে দাবি করে ভারত। একে কেন্দ্র করে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। পরদিন পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে ভারতীয় দুই যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তানী বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনের ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের কাছে ইতিবাচক খবর আসছে। তাদের নিবৃত্ত করার প্রচেষ্টায় আমরা যুক্ত ছিলাম। আমাদের কাছে ভাল খবর আছে। আশা করছি বিদ্যমান পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এর আগে পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় দুই দেশকেই যে কোন মূল্যে উত্তেজনা এড়িয়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পাকিস্তান দুই ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার পর এ আহ্বান জানান তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। উভয়ের সঙ্গে আলোচনাকালেই তিনি উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, তুরস্ক, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর পক্ষ থেকেও দুই দেশকে উত্তেজনা এড়িয়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
×