ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলা শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১ মার্চ ২০১৯

এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আলোকচিত্রে সজ্জিত বর্ণিল এক আয়োজন। রাজধানী ধানম-ির চারপাশজুড়ে ছয়টি গ্যালারিতে দেখা মিলবে দেশ-বিদেশের আলোকচিত্রীদের বিবিধ বিষয়ের ফটোগ্রাফি। শিল্পরসিক দর্শকদের জন্য ২১ দেশের ৪৪ শিল্পীর কাজ নিয়ে সাজানো হয়েছে ৩৩টি প্রদর্শনী। এমন বিশাল শিল্পসম্ভার নিয়ে শুরু হলো এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলা। দশ দিনব্যাপী দশম উৎসবটি বৃহস্পতিবার বৃষ্টিঝরা সকালে ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তনে উদ্বোধন করা হয়। এবারের ছবিমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘স্থান’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রুবিন মিউজিয়াম অফ আর্টের কিউরেটর বেথ সিট্রন, নেপালের প্রকাশক লেখক ও সম্পাদক কুন্দা দীক্ষিত, বিশ্বখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই ও অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। পান্থপথের পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে শুরু হয়ে ছায়ানট ভবনের সামনে শেষ হয় শোভাযাত্রা। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে বাংলাদেশে আলোকচিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবারের উৎসবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রয়াত আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমেদকে। তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার বোন তাহমিনা খান। শহিদুল আলম বলেন, আমরা এমন সময়ে উৎসব করছি যখন চকবাজারে এত অসংখ্য মানষ পুড়ে মারা গেল। ২০১০ সালে নিমতলীতেও এভাবে মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা থেকে শিক্ষা নেয়নি। নিলে এত মানুষ মারা যেত না। সারাদেশে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এর নামে মানুষ হত্যা চলছেÑএসবের বিরুদ্ধে কথা বলে ছবি, ছবিমেলা। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধোন্মুখ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু- বিশ^জুড়েই এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় শান্তি আনা অনেকটা ‘মিশন ইম্পসিবল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্পের আলোতেই যেন শহিদুল আলমের কথার জবাব আলোকচিত্রী রঘু রাই। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ফটোগ্রাফি নিয়ে পলিটিক্স করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ সত্যকে ক্যামেরায় ধারণ করা। এই সত্যের অন্বেষণ থেকে কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। রেহমান সোবহান বলেন, সত্যকেও কখনও কখনও ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলে। অনেক সময় তা বদলে দেয়ার চেষ্টাও করতে দেখা যায়। কিন্তু ছবি সেটা হতে দেয় না। শিল্প শিল্পই। যা আমাদের ঋদ্ধ করে। আমাদের উন্নত মানুষ করে। আমাদের সত্য বলার শক্তি জোগায়। কুন্দা দীক্ষিত বলেন, আমরা সত্যকে খুঁজি। ক্যামেরায় সত্যকে ধারণ করি। এজন্য কখনও কখনও আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এবারের উৎসবে ম্যান বুকার পুরস্কার ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায়, বিশ্বখ্যাত জার্মান প্রকাশক ও বুকমেকার গেরহার্ড স্টাইডল, ভারতীয় বাঙালী গায়িকা, গান লেখিকা ও সঙ্গীত গবেষক মৌসুমি ভৌমিক, খ্যাতিমান ভারতীয় আলোকচিত্রী ও ফটো-সাংবাদিক রঘু রাইকে নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা রয়েছে। ছবিমেলার এবারের কর্মসূচীর মধ্যে আছে ২১টি দেশের ৪৪ শিল্পীর কাজ নিয়ে ৩৩টি প্রদর্শনী। ভিন্নমাত্রার এই প্রদর্শনীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান ডকুমেন্টারি আলোকচিত্রী সুজান মেইসেলাসের ১৯৭০ দশকের শেষের দিকের নিকারাগুয়া বিপ্লবের উপর ভিত্তি করে ‘নিকারাগুয়া ইন টাইম’, ‘আর্কাইভস অব পারসিস্টেন্স’, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, কাশ্মীর ফটো কালেকশন, জাগ ছবি কালেকশন ও বুর্জ আল-শামালি কালেকশন প্রকল্পগুলোর সমন্বয়ে এক ধারাবাহিক আয়োজন। উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের কিংবদন্তি আলোকচিত্রী প্রয়াত রশীদ তালুকদারের কাজ নিয়ে ‘রশীদ তালুকদার (১৯৩৯-২০১১): এ লাইফ’স ওয়ার্ক’। প্রদর্শনীটি থাকছে বাংলাদেশী মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক অমূল্য ও চাক্ষুস দলিল হিসেবে যেখানে রয়েছে গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকের ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ছবি এবং সেই সঙ্গে আরও অনেক সাধারণ মানুষ ও জীবনযাত্রার ছবি। দশম ছবিমেলায় রয়েছে নানা আকর্ষণীয় আয়োজন। উৎসবের সকল প্রদর্শনীস্থলই ধানম-ি ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থিত। পান্থপথে নির্মাণাধীন দৃক-পাঠশালা ভবনটি উৎসবের মূল প্রদর্শনীস্থল। সেই সঙ্গে অন্য গ্যালারি হিসেবে থাকছে ধানম-ি ও পান্থপথে অবস্থিত দৃকের দুইটি গ্যালারি, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ, বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দ্য ঢাকা। বিভিন্ন আর্টিস্ট টক, প্যানেল আলোচনা এবং কিউরেটেড স্লাইডশোর আয়োজন থাকছে গ্যেটে ইনস্টিটিউটে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দ্য ঢাকার গ্যালারিতে দেখা যাবে নির্বাচিত অসাধারণ কিছু চলচ্চিত্র। উৎসবের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিশ্বজুড়ে থাকা বিশিষ্ট আলোকচিত্র অনুশীলনকারীদের নিয়ে ৮টি কর্মশালা। দশম ছবিমেলায় এ বছর স্থান-ভিত্তিক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে ১৩ বাংলাদেশী শিল্পীকে ‘ফেলো’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এবারের বিষয় ‘স্থান’কে বিশদভাবে অনুসন্ধানের জন্য চিত্রকর্ম, অঙ্কন, এ্যানিমেশন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, ভিডিও, সাউন্ড এবং ইনস্টলেশনসহ নানা মাধ্যমের শিল্পীরা তাদের মাধ্যমের সম্ভাবনার প্রসার এবং প্রকাশের ভাষাকে পরীক্ষা করছেন। এই কাজগুলোর তত্ত্বাবধায়নে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন আমন্ত্রিত কিউরেটর জিহান করিম। রিক্সাভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী পরিণত হয়েছে ছবি মেলার ট্রেডমার্কে। সেই সূত্র ধরে এবারও রিক্সাভ্যানে চেপে দেশ-বিদেশের আলোকচিত্র ঘুরে বেড়াবে ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে। দশ দিনের উৎসবটি শেষ হবে ৯ মার্চ।
×