ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১ মার্চ ২০১৯

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা

সংসদ রিপোর্টার ॥ গতবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ৬টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাংকটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপী ঋণ থাকা ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৪৪১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৫ হাজার ৬৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৮৭০ কোটি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৭৭৯ কোটি টাকা। মন্ত্রী জানান, খেলাপী ঋণ হ্রাসকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খেলাপী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনসমূহ পর্যালোচনা ও সংস্কারের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়া আইনী কাঠামোর আওতায় খেলাপী ঋণ আদায় প্রক্রিয়া গতিশীল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের নিমিত্তে ইতোমধ্যে আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো পুনঃপর্যালোচনা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে খেলাপী ঋণ অনেকাংশেই হ্রাস পাবে মর্মে আশা করা যায়। এছাড়া ঋণের বিপরীতে গৃহীত সহায়ক জামানত মূল্য নির্ধারণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং জামানত সংক্রান্ত তথ্য সিআইবি ডাটাবেইসে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের ২০ শীর্ষ ঋণ খেলাপী ॥ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে (ডিসেম্বর, ২০১৮ ভিত্তিক) ঋণ খেলাপীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮। দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ ঋণ খেলাপীর মধ্যে রয়েছে- কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিঃ, সামানাজ সুপার ওয়েল লিঃ, বি আর শিপিং মিলস, সুপ্রভ ফুটওয়্যার, রাইজিং স্ট্রিল, কম্পিউটার সোর্স লিঃ, বিনিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যাক্স শিপিং মিলস, এস এ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, রুবিয়া ভেজিটেবল ওয়েল, আনোয়ারা শিপিং মিল, ক্রিসেন্ট লেদার মিলস, সুপ্রভ রোটর শিপিং, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়ারস, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রুপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, এ্যালপা কম্পোজিট টাওয়েলস এবং এম এম ভেজিটেবল ওয়েল প্রোডাক্টস লিমিটেড। অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপীর নাম প্রকাশ করে জানান, মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার কারণে উক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য কিছুসংখ্যক ঋণ খেলাপী প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ১ হাজার ৪০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ১১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। উক্ত পরিশোধিত অর্থের মধ্যে আসল বাবদ ৯ হাজার ১৪৩ কোটি এবং সুদ বাবদ ২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। তিনি জানান, বিগত অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পরিশোধিত ঋণ যথাক্রমে ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ১৫ ভাগ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ ভাগ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ৪১ ভাগ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় শতকরা ৩১ ভাগ বেশি। বৈদেশিক ঋণ সাড়ে ৩৩ হাজার মিলিয়ন ডলার ॥ সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, গতবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতির মোট পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ২০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এছাড়া এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ৮ হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপান ৪ হাজার ৭১৫ মিলিয়ন, ইসলামী ব্যাংক ৫২১ মিলিয়ন, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ৪৫৩ মিলিয়ন, চীন ১ হাজার ৯৯৭ মিলিয়ন, রাশিয়া ১ হাজার ২০৫ মিলিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৩০ মিলিয়ন, ভারত ৩২৪ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সংস্থার কাছে বৈদেশিক ঋণ স্থিতির পরিমাণ ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
×