ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১ মার্চ ২০১৯

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ ভারত থেকে বিদ্যুত এবং জ¦ালানি তেল আমদানির পর এবার রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (আরএলএনজি) আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড এর মতোই সীমান্তের ওপার থেকে পাইপ লাইন নির্মাণ করে এই গ্যাস বাংলাদেশে আনা হবে। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসিএল) এর কাছ থেকে শুরুতে প্রতি দিন ২০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমাদনি করা হবে। জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগ তাদের এক উপস্থাপনায় এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে পরিকল্পনাটি মার্চের শুরুর দিকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে আইওসিএল এর কোন এলএনজি টার্মিনাল থেকে এই গ্যাস আমদানি করা হবে। সাতক্ষীরার ভোমরাতে এজন্য জিটিসিএল গ্যাস রিসিভিং পয়েন্ট স্থাপন করবে। এজন্য জিটিসিএল ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করবে। জিটিসিএল সূত্র বলছে এজন্য সাতক্ষীরা ভোমরা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করবে তারা। এই পাইপ লাইনটি ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এলএনজি টার্মিনাল পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে ভারত। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস বিতরণ করার জন্য সরকার সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গঠন করেছে। বিতরণ কোম্পানি ভোলায় কিছু গ্যাস বিতরণ করলেও কার্যত আর কোথাও তেমন কার্যক্রম নেই। জাতীয় গ্রিড থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। খুলনা পর্যন্ত জাতীয় গ্যাস গ্রিড নির্মাণ করা হলেও তা অনেকটা বসেই রয়েছে। এছাড়া খুলনায় স্থানীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহের জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল তা মাঝপথে এসে ঠেকে রয়েছে। পাইপ লাইন কেনা হলেও গ্যাসের সঙ্কটের কারণে যা বসানো হয়নি। ফলে কয়েক শ’ কোটি টাকার পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র বলছে, সরকার দেশের সকল এলাকায় জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জায়গাতে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও খুলনা এবং রাজশাহী অঞ্চল এক্ষেত্রে অবহেলিত। ভেড়ামারা এবং খুলনাতে গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এইসব কেন্দ্র চলছে তরল জ¦ালানিতে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্যাস না থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান এলপিজি ব্যবহার করলেও তাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। পেট্রোবাংলা বলছে এখনও গ্যাস সরবরাহ চুক্তি (জিএসএ) সই হয়নি। তবে জিএসএ সই করার প্রক্রিয়া চলছে। খুলনা এলাকায় নতুন গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণেরও অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যে চাহিদা এলএনজি আমদানি করে মেটানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় এলএনজি আমাদনি শুরু হলেও খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলের উপকূলে এলএনজি আমদানি করা দুরূহ বিষয়। সাধারণত এলএনজি আমদানির জন্য সাগরে ১৬ থেকে ২০ মিটার ড্রাফট থাকতে হয়। কিন্তু খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলের উপকূলে কোথাও এই ড্রাফট নেই। পায়রা এবং মংলার ড্রাফট কম হওয়াতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সরকারী আহ্বানে সাড়া নেই তেমন। যদিও কেউ কেউ বলছেন ভারতের উড়িষ্যার ধামড়াতে আদানির এলএনজি টার্মিনালে আইওসিএল এর অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে টার্মিনালটির দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করে এলএনজি আমদানি শুরু করা কঠিন বিষয়। এক্ষেত্রে ভারত কতটা আন্তরিক তার ওপর নির্ভর করছে এলএনজি আমাদনি। যদিও বাংলাদেশের প্রধান জ¦ালানি গ্যাস। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের কোন বড় মজুদ নেই ফলে দীর্ঘ মেয়াদী বাণিজ্যের বিষয়টি চিন্তা করলে ভারত আগ্রহী হতে পারে। এর আগে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ এখন এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে। এর বাইরে আরও তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমাদানির প্রক্রিয়া চলছে। এর বাইরেও ভারতের নুমালিগড় পরিশোধনাগার থেকে বাংলাদেশ তরল জ¦ালানি তেল আমাদনি করছে। বছরে ১০ লাখ মেট্রিকটন জ¦ালানি তেল আমাদনি করার জন্য পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
×