ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘আব্বা, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে’ ॥ চকবাজার ট্র্যাজেডি

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১ মার্চ ২০১৯

‘আব্বা, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে’ ॥ চকবাজার ট্র্যাজেডি

পৃথিবীতে নাকি সবচেয়ে ভারি বস্তু হচ্ছে পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। সেই ভারি বস্তু আরও ভারি হয় যখন পিতার কাঁধে পুত্রের অস্বাভাবিক লাশ থাকে। আর এ চিত্র কিছুদিন আগেই অনেকটা নিয়মিত হয়ে ধরা দিয়েছে চকবাজারের চুড়িহাট্টায়। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ বহন করতে হয়েছে পিতাকে। দৃশ্যটা কল্পনা করা সত্যিই কষ্টদায়ক যখন পিতাকে ফোন করে জানানো হয়- আব্বা, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে। সহপাঠী তুহিন (সম্পর্কে এনামুলের চাচা) যখন এনামুলের লাশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তখনই ফোন দিয়ে তার বাবাকে জানায়। খবরটা এনামুলের বাবার কানে যখন পৌঁছায় তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বোঝার ক্ষমতা বুঝি সেই বাবা ছাড়া আর কারও নেই। এমনি দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের যার ক্ষত হয়তো কবে শুকাবে তা জানা নেই। তবে এ দৃশ্যের অবতারণার একমাত্র কারণ কিন্তু অসাবধানতা। নিমতলী থেকে চকবাজার সময়ের ব্যবধান ৮-৯ বছর হলেও টনক কিন্তু নড়ছে না আমাদের। কোন কিছু ঘটলেই শুরু হয়ে যায় একে অপর কে দোষারোপ করা। কিন্তু সচেতনতার নামে সেই লবডঙ্কা। যে মারা গেল সে তো চলেই গেল কিন্তু যারা বেঁচে থাকি তারা কি দিন গুনবো আমরা কবে মারা যাবো নাকি যারা ইতোমধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে তাদের মতো আর যেন কারও মৃত্যু না হয় সেদিকে সচেষ্ট থাকব? উচিত তো তাই, অস্বাভাবিক মৃত্যু রোধ করা। সরকারের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা তো থাকেই কিন্তু নিজেদের সাবধানতা এবং সচেতনতাও কিন্তু বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কেউ হয়তো নিজেদের করণীয়টা ভেবে দেখছি না। যদি পুরান ঢাকাকেই উদাহরণ হিসেবে ধরি তাহলে একটা বিষয় পরিষ্কার হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন নতুন বাংলাদেশ বিশেষ করে পুরান ঢাকাকেই ঢেলে সাজানো প্রস্তাব দিয়েছিল। সে প্রস্তাব যতদূর জানা যায় স্থানীয়দের ইচ্ছাতেই নাকচ হয়ে যায়। বাপ-দাদাদের স্মৃতি আগলে রাখতে নস্টালজিক হয়ে পড়ায় সে ঢাকা আর পুনর্গঠিত হয়নি। যার ফল হয়তো এখন আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকতে পারছে না এ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। আবার সরকারে কাছে হয়তো আমরা প্রত্যাশা করতে পারতাম পুরান ঢাকা হয়ে উঠবে আমেরিকার নিউ আর্লিন্স শহরের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার। প্রতি বছরই এ শহরে ‘মার্ডি গ্রা’ নামক একটি ফেস্টিভ্যাল হয় যা সারা বিশ্বে বিখ্যাত। নামেই বোঝা যায় ফরাসিদের হাতেই এ শহরটির গোড়াপত্তন। প্রচুর দর্শনার্থী এ শহরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, রাস্তা-ঘাট দেখতে আসে। কিছু কিছু ভঙ্গুর বাড়ি ঘর পুরনো আদলে মজবুত করে নির্মাণ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এবং শহরটিযে খালি তা কিন্তু নয়। সেসব বাড়ি-ঘরে বসবাস করছে লোকজন। আর এরই মধ্য দিয়ে পর্যটকরা তাদের সৌন্দর্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরাও হয়তো পারতাম আমাদের পুরান ঢাকার বাড়ি ঘরগুলো ভগ্নদশা চেহারা হওয়ার আগেই সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। বুড়িগঙ্গা নদীকে মিসিপিসি নদীর মতো সৌন্দর্যম-িত করে গড়ে তুলতে। কিন্তু আফসোস তা হয়নি। এবং এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষেরও কোন জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। কেন এই মৃত্যুর মিছিল বাংলায় একটা প্রবাদ আছে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। কিন্তু আমরা মনে হয় দিন দিন জড়ো পদার্থে পরিণত হচ্ছি। নিজস্ব জ্ঞান বুদ্ধি দিন দিন বুঝি ক্ষীণ হয়ে আসছে। তা না হলে চোর বারবার পালাচ্ছে কিন্তু বুদ্ধি আর বাড়ছে না। ২০১০ সালে পুরান ঢাকারই নিমতলী ট্র্যাজেডি সবার জানা থাকা সত্ত্বেও চকবাজার ট্র্যাজেডি নতুন করে দেখতে হলো। সহজ কথায় অনেকেই সরকারকে দোষারোপ করে থাকেন। আচ্ছা ধরেই নিলাম সরকারের দোষ তারপরেও নিজেদের দোষটুকু কি চোখে পড়ছে না। অগ্নিকা- যে কোন অসাবধানতার কারণে হতেই পারে। কিন্তু সেই অগ্নিকা- যখন দাবানলে পরিণত হয় তখন কিন্তু দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। একের পর এক লাশের মিছিল দেখতে কে চায়? তাও যদি সেটা হয় আবাসিক এলাকা। নিমতলীর ঘটনার পর ঘোষণা করা হয়েছিল কোন দাহ্য পদার্থের গুদাম পুরান ঢাকায় থাকবে না। সে সময় অনেকেই তা সরিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু গোপনে কেউ কেউ সেটা লালন করে যাচ্ছিল। সে খেসারতই দিতে হলো চকবাজারের চুড়িহাট্টার বাসিন্দাদের। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে মনে হচ্ছিল কোন জঙ্গলের দাবদাহ। প্রশ্ন হচ্ছে আগুন না হয় লাগলো কিন্তু এর তীব্রতা তাই বলে এত হবে? এ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো অবস্থা। তারই পরিণতি এই লাশের মিছিল। কেন জানি মনে হয় আগুনে এই ঘি ঢেলে দেয়ার উপকরণ যদি না থাকত তাহলে হয়তো এত তীব্র হতো না। তাহলে গোপনে এই রসদ রেখে দেয়ার দায় কে নেবে? ওয়াহেদ ম্যানশনে খুঁজে পাওয়া রাসায়নিক দ্রব্য যেন আগুনে ঘি এর কাজ করেছে। আরও প্রশ্ন জাগে যারা এই বাড়ির বাসিন্দা তারা কি দুনিয়ার কোন খোঁজই রাখেন না। যারা দিনের পর দিন দেখে যাচ্ছেন বাড়িটির নিচতলায় রাসায়নিক পণ্যের গুদাম। দেখা সত্ত্বেও কোন প্রতিক্রিয়া তারা কখনও দেখিয়েছিলেন কি না সেটাও ভাবার বিষয়। কিংবা এলাকা উন্নয়নের জন্য নেতৃবৃন্দ কিংবা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও কী চোখ এড়িয়ে গেছে এ দৃশ্যগুলো? ভেবে দেখার বিষয় লাশের মিছিল দেখার আগে কিছু সমাধান কিন্তু নিজেদের হাতেও ছিল। ২০১৩ সালে পুরান ঢাকায় রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা বন্ধে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা বন্ধ করে দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সবাই কেমন যেন চেপে গেছে ব্যাপারগুলো। সে নীরবতাই নীরব করে তুললো এলাকাটিকে। পরিণতি ৬৯ জনের মৃত্যু। তবে এ দৃশ্য কিন্তু এও প্রমাণ করে জনমানুষের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং নগর পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার চিত্র। নিউইয়র্ক শহরের ট্রায়াঙ্গেল শার্টওয়েস্ট কোম্পানিতে আগুন লেগে যায় ১৯১১ সালে ২৫ মার্চে। তখন গার্মেন্টস শিল্প পশ্চিমা দেশগুলোতে শোভা বৃদ্ধি করছিল। কোম্পানিটির ফ্যাক্টরিতে বহুতল ভবনের কয়েকটি ফ্লোরে অনেকটা গাদাগাদি করেই কাজ করত শ্রমিকরা। একটি সিগারেটের আগুন থেকে সেখানে আগুনের সূত্রপাত। হঠাৎ আগুন লেগে যাওয়াতে দিশেহারা হয়ে যায় শ্রমিকরা। কাপড়ের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ভাল না থাকায় মুহূর্তেই পুড়ে কয়লা হয়ে যায় ১৪৬ জন শ্রমিক। ব্যাপারটা বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল সে সময়ে। এবং এটাই নিউইয়র্কের জন্যও একটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ধরা দেয়। এরপর কারখানাগুলোতে স্প্রিংকলার সিস্টেম, ফায়ার এস্কেপ, ফায়ার হোস, ফায়ার হাইড্রেন্টসহ আরও অনেক কিছু কড়াকড়িভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়। এবং সে পদ্ধতি আজোবধি বলবৎ রয়েছে বরং দিন দিন আপডেট হয়েছে নিয়মগুলো। রাসায়নিক, কিংবা বিস্ফোরক পণ্যের জন্য নীতিমালা আরও কঠিন। যে কারণে এখন পর্যন্ত কারখানা সংক্রান্ত কিংবা বিস্ফোরক সংক্রান্ত অগ্নিকা-ের ঘটনা কম। আর ঘটলেও বড় কিছু হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় সহজেই। কিন্তু আমাদের জন্য তো নিমতলীই পারত টার্নিং পয়েন্ট হতে। তা হয়নি, তাই চুড়িহাট্টায় দেখতে হলো লাশের মিছিল। প্রসঙ্গ যখন গ্যাস সিলিন্ডার আমাদের দেশে কাজগুলো ভাল উদ্দেশ্যে শুরু হলেও পর্যাপ্ত দেখভালের অভাবে তা একসময় বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়। গ্যাস সিলিন্ডারও যেন তেমনি এক উদাহরণ। প্রাকৃতিক গ্যাসের যথেচ্ছা ব্যবহার ঠেকাতে তা নিয়ে আসা হলো সিলিন্ডারে। যাতে করে নিজ পরিমাপ মতো মানুষ তা ব্যবহার করতে পারে। বাসা বাড়ি কিংবা হোটেলগুলোতে গ্যাস লাইন সংযোগের পরিবর্তে যোগান দেয়া হলো সিলিন্ডারের। এতে গ্যাসের অপচয় কমেছে ঠিকই কিন্তু অন্য আরেকটি জায়গায় তা হুমকি হয়ে দাঁড়ালো। পত্র-পত্রিকা খুললে এখন প্রায়ই দেখা যায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। কিন্তু তারপরেও যেন কেউ গা করছে না। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হয় গাড়িতে না হয় বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু এখনও এর সঠিক সমাধান মিলেনি। এই কিছুদিন আগেই কাওরানবাজারে জাহাঙ্গীর টাওয়ারের সঙ্গে লাগোয়া একটি টং দোকানের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার এসিতে আগুন ধরে যায়। এতে প্রাণহানি ঘটনা না ঘটলেও দোতলা পুরোটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গত চার বছরের হিসাব ধরা হলে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪৭৬টি। এর মধ্যে গত দুবছরে ঘটছে সবচেয়ে বেশি। দুঃখের বিষয় এ সংক্রান্ত এখন পর্যন্ত কোন নীতিমালা তৈরি হয়নি। এছাড়াও এ সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের গুণগত মান নির্ণয় করার পদ্ধতিও এখন পর্যন্ত অজানা। একটা সিলিন্ডার কতটুকু পর্যন্ত ব্যবহৃত হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে তার কোন নির্দেশিকা নেই। যার ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সিলিন্ডার ব্যবহারের ঝুঁকি। চুড়িহাট্টায় বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে সিলিন্ডারকে। আর এই সিলিন্ডার কেন বিস্ফোরিত হলে সে দায় কে কার ওপর বর্তাবে? এখনও সময় আছে ভেবে দেখবার। তা না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। যা কারও কাম্য নয়। পুরান ঢাকা এবং এর মনস্তাত্ত্বিক ধরন ঢাকাকে যদি কথার খাতিরে দুই ভাগে ভাগ করা হয় তাহলে একটি অংশকে বলা হয় পুরান ঢাকা এবং অন্য অংশ নতুন ঢাকা। বিশেষত বুড়িগঙ্গা হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত জায়গাকে বলা হয় পুরান ঢাকা এবং এরপর যেসব বসতি গড়ে উঠেছে তার সবই নতুন ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। নতুন ঢাকাতেও পুরনো বাড়িগুলো ভেঙ্গে বিশাল এপার্টমেন্ট গড়ে উঠলেও পুরান ঢাকায় এ দৃশ্য এখনও তেমন চোখে পড়ে না। কিছু কিছু এলকায় দেখা গেলেও তা হাতেগোনা। সেই পুরনো বাড়িতেই দিব্বি দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। কপালে কোন দুশ্চিন্তার লেশ মাত্র নেই। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে জানা গেল বাপ দাদাদের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে থাকতে তাদের ভাল লাগে। পুরনো অবয়ব ভাঙ্গতে নাকি মন সায় দেয় না। যে কারণে জীর্ণ-শীর্নতেও থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে শিক্ষাগত যোগ্যতার হার অন্যান্য জায়গার চেয়ে কম। খুব অল্প সময়েই নাকি পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ব্যবসা বা কাজে ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একটা সময় ব্যবসায়িক পরিধি ভাল অবস্থানে থাকায় সে সময় অনেক অশিক্ষিত মানুষও প্রচুর টাকা কামিয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার এই বাজারে সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি সে মানসিকতার। আজও ব্যবসাতে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বাঁধ সেদেছে পড়ালেখায়। যার ফলে দিন দিন পুরান ঢাকার মানুষ একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে যাচ্ছে। বহিঃর্বিশ্বে কি ঘটে যাচ্ছে তা যেন প্রভাব ফেলছে না, ভাবখানা এমন। যদিও এখন অনেকেই এখান থেকেই দেশ ও দেশের বাইরে পারি জমাচ্ছে পড়াশোনার জন্য তবে সেটা সংখ্যায় কম। দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে ভাবার সময় বোধহয় পুরান ঢাকার মানুষদের নেই। যে কারণে নিজ চর্চায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সুদূর চিন্তার কোন প্রকাশ ঘটেনি বলেই হয়তো পুরান ঢাকার জীর্ণশীর্ণ ভবন এখনও দেখা দেয়। এক অগ্নিকাণ্ডে যে অবস্থা সে শোকই তো বইতে পারছে না দেশবাসী। বর্তমান সময়ে ভূমিকম্পের যে তীব্রতা তা দিন দিন ভাবিয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে যেসব ভূমিকম্প ঘটে গেছে তা মনে রাখার মতো। হয়তো অতীতের কম্পন এরই মধ্যে দুর্বল করে রেখে গেছে পুরনো এবং পরিকল্পনহীন বাড়ি ঘর কিংবা মার্কেটগুলোর জন্য। এর মধ্যে যদি আরও কিছু ধাক্কা লাগে তো বলা যায় না কি হয়। না জানি আবার দেখতে হবে রানা প্লাজার মতো কোন দৃশ্য। আমরা কখনই তা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে ঘটনাগুলো। প্রতিবছরই প্রজ্ঞাপন জারি করে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয় মানুষদের। কিন্তু আবার চুপিসারে ফিরে আসে তারা। ফলাফল পাহাড় ধসে প্রতি বছরই মৃত্যু। কবে আর সচেতন হবো আমরা। যেখানে আমাদের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। নিজ দায়িত্বে সরতে চাই না। পুরান ঢাকার দৃশ্যই যেন ঠিক তেমন। জীর্ণ বাড়িতে বসবাস চলছে নির্বিঘ্নে কিন্তু কোন উদ্যোগ নেই সেটা সংস্কারের কিংবা পুনর্নির্মাণের। ঘটনা যদি কিছু ঘটে যায় তবেই শুরু হয়ে যাবে একে অপরের প্রতি দোষারোপ। প্রত্যাশা ও করণীয় এদেশের মানুষ নিজ বাড়ির সম্পত্তি হীরের চেয়ে দামি ভাবায় এক ইঞ্চি জায়গা থেকে সরে দাঁড়াতে যেন মূর্ছা যায়। যে কারণে পুরান ঢাকা সরু রাস্তা বড় করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এখনও কেউ ভেবে দেখছে না ঘটে যাওয়া অগ্নিকা-ের আগুন নেভাবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঠিকমতো ঢুকতে পারেনি। ব্যাহত হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ। তা দেখেও যদি হুঁশ না হয় তবে আর কবে হবে। কিংবা বিকল্প ব্যবস্থাও তো করা উচিত। যদি রাস্তা বড় করা নাই সম্ভব হয় তাহলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে এমন কিছু প্রস্তুত করা উচিত যা অন্তত ফায়ার সার্ভিস আসার আগে ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করে। এ কথা তো বলাই যায় রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ না থাকলে আগুনের তীব্রতা এত হতো না। তাহলে নিজ দায়িত্বে কেন এসবের দেখভাল করছি না। কেন চোখ ফাঁকি দিয়ে গুদামজাত করতে হবে রাসায়নিক দ্রব্য। খুব দ্রুতই সিলিন্ডারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। জনগণের জান মালের নিরাপত্তা সরকারেই দিতে হবে। আমরা আর দেখতে চাই না বাস কিংবা টেম্পোর সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে মানুষের মৃত্যু। কিংবা নিমতলী-চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডিও আর দেখার ইচ্ছে নেই। অস্বাভাবিক মৃত্যুর এ মিছিল বন্ধ করতেই হবে। মা যেন তার ছেলের লাশ খুঁজতে মর্গে মর্গে না দৌড়ায় সেটাই আমাদের কাম্য। জীর্ণ বাড়িঘর অতিশীঘ্রই যেন আধুনিকরণের আওতায় আনা হয়। প্রতিটি মহল্লার দেখভালের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেই নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে সচেতন হতে হবে আমাদের। বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করার সময় এখনই।
×