ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুলা শুঁটকি!

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১ মার্চ ২০১৯

ভুলা শুঁটকি!

মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ ফসলের পুরো মাঠজুড়ে নীল রঙের সূক্ষ্ম ফাঁসের নেট বিছানো। মাইলের পর মাইল জুড়ে এ দৃশ্য। কেউ নেটের ওপর ছোট্ট চিংড়ি শুকাচ্ছেন। কেউ আবার ময়লা আবর্জনা বাছাই করছেন। কেউবা বস্তায় রাখছেন। সবাই ছোট্ট চিংড়ির শুঁটকি করায় ব্যস্ত। শত শত মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন এ কাজে। বাঁধ ভাঙ্গা জনপদ কলাপাড়ার নিজামপুরসহ খালগোড়া পর্যন্ত একই দৃশ্য। অন্তত হাজার খানেক পরিবারের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে জীবন-জীবিকার কর্মযজ্ঞ চলছে আন্দারমানিক নদী তীরের দীর্ঘ ফসলি মাঠে। আমন ফসল নেই মাঠে। হয় না বাঁধ ভাঙ্গার কারণে। বর্ষায় থাকেন সবাই পানিবন্দী। তাই এসব মানুষ আবার যাদের জমি তারা বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। এলাকার কৃষক কাম জেলে ছিদ্দিক মুন্সী জানান, অন্তত এক শ’ পাইকার আড়ত রয়েছে এ চিংড়ি শুঁটকি করার পার্টি। যারা কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ ব্যবসা করে আসছেন। একেকটি আড়তে পাঁচ থেকে সাতজন মানুষ খাটেন। শত শত জেলে সুক্ষ্ম ফাঁসের নেট দিয়ে সাগর মোহনাসহ আন্দারমানিক নদীতে চিংড়ি আহরণ করেন। এক ঝুঁড়ি (সাজি) চিংড়ি আট শ’ থেকে ১২ শ’ টাকায় কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করেন জেলেরা। আড়ত মালিকরা এই মাছ কিনে ফসলের মাঠে শুকায়। কোন ধরনের কীটনাশক কিংবা লবণ ছাড়াই এ চিংড়ির শুঁটকি উত্তরাঞ্চলের মোকামে খুব জনপ্রিয়। সুস্বাদু। উত্তরবঙ্গেও রংপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন মোকামে চালান করেন আড়ত মালিকরা। বাস-ট্রাক কিংবা উত্তরাঞ্চল থেকে আসা কার্গো পরিবহনে শুঁটকি মোকামে চালান করেন। এ চিংড়ির শুঁটকিকে আবার জেলেরা ভুলা শুঁটকিও বলেন। সাধারণত তিন-চার জাতের চিংড়ির শুঁটকি করেন এসব জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। ছোট চিংড়ি শুকাতে একদিন আর বড়টা শুঁটকি করতে লাগে দুই দিন। অধিকাংশ আড়ত মালিকরা বিক্রি মূল্য কেজি ২০০-২৭০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। তবে চার মাসের এ মৌসুমে প্রত্যেক আড়ত মালিক ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারেন এ শুঁটকির মাধ্যমে।
×