ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশীয় কম্প্রেসর শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১ মার্চ ২০১৯

দেশীয় কম্প্রেসর শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে সর্বোচ্চমানের রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশ-বিদেশে রয়েছে এ খাতের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। কিন্তু দেশে এই প্রযুক্তি শিল্প বিকাশের পথে বড় অন্তরায় বিদ্যমান শুল্ককাঠামো। কম্প্রেসর ও কাঁচামাল আমদানিতে অসামঞ্জস্যমূলক শুল্ক থাকায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে এ খাতের বিশাল বিনিয়োগ। তাই স্থানীয় পর্যায়ে কম্প্রেসর তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের বিনিয়োগকারীরা। সূত্রমতে, বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ তৈরি রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর আমদানিতে রয়েছে ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি। অথচ বাংলাদেশে কম্প্রেসর উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে ১০.৭২ থেকে ২৮.৭২ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি দিতে হচ্ছে। তার মানে, সম্পূর্ণ তৈরি কম্প্রেসর আমদানির তুলনায় দেশে কম্প্রেসর তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ, উৎপাদনের চেয়ে আমদানি বেশি লাভজনক। যা দেশীয় শিল্প বিকাশে অন্তরায়। এর ফলে ঝুঁকির মুখে এ খাতের বিশাল বিনিয়োগ। জানা গেছে, কম্প্রেসর তৈরির অন্যতম কাঁচামাল বা উপাদনের মধ্যে এ্যালুমিনিয়াম উন্ডিং ওয়্যার, লেভেল, রিভেট, স্টিল পিন, স্পেসিং স্লিভ, রাবার গ্রুমেট, রাবার প্লাগ, রাবার ক্যাপ, ক্ল্যাম্পিং স্লিভ আমদানিতে ২৮.৭২ শতাংশ এবং সাসপেনশন স্প্রিং, গ্যাসকেট, ওয়েল্ডিং ওয়্যার, ইনসুলেশন লেয়্যার আমদানিতে ১৫.৭২ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ধার্য করা আছে। এছাড়া, লেসিং কর্ড আমদানিতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ১০ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কম্প্রেসরে ব্যবহৃত আমদানিকৃত এসব কাঁচামালের গড় শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমিক ও কারখানা ব্যয়সহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন খরচ। যেখানে, সম্পূর্ণ তৈরি রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটিতে আমদানি করা হচ্ছে। এতে করে, দেশে কম্প্রেসর উৎপাদন নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১৭ সাল থেকে কম্প্রেসর তৈরি করছে ওয়ালটন। তারা গাজীপুরের চন্দ্রায় ১৬ লাখ বর্গফুট জায়গায় গড়ে তুলেছেন দেশের একমাত্র কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট। এছাড়া বিশ্বে ১৫তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। আর এশিয়ায় ৮ম ও সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ২য়। ওয়ালটনের কম্প্রেসর উৎপাদন কারখানায় ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে স্টিল, জিংক, এ্যালুমিনিয়াম ও কপার কাস্টিং, ফাউন্ড্রি, টেস্টিং, মেটাল প্রসেসিং সিস্টেম ইত্যাদির আলাদা প্রসেসিং ইউনিট। গবেষণা ও উন্নয়ন, উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং টেস্টিং বিভাগে নিয়োজিত রয়েছেন ইউরোপের উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক প্রকৌশলী। তারা ইউরোপিয়ান প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতিতে তৈরি করছেন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত সর্বোচ্চমানের কম্প্রেসর। ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটন কম্প্রেসর তৈরি করায় ভারী প্রযুক্তি শিল্পে বাংলাদেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ও ইমেজ আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে বিশাল সম্ভাবনাময় শিল্পখাত। কিন্তু, সম্পূর্ণ তৈরি কম্প্রেসর ও কাঁচামাল আমদানির মধ্যে বিদ্যমান অসম শুল্ক কাঠামো এ শিল্পখাতের সকল সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ খাতের স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষায় কাঁচামাল আমদানির বিদ্যমান শুল্ক কমানো প্রয়োজন। ফ্রিজ, এসি, টেলিভিশন উৎপাদন শিল্পের মতো সরকারের কাছ থেকে দেশীয় কম্প্রেসর উৎপাদন শিল্প বিকাশেও সহায়ক শুল্ক ও নীতি সহায়তা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। ওয়ালটন কম্প্রেসর মেনুফ্যাকচারিং ইউনিটের চীফ অপারেশন অফিসার মীর মুজাহেদূল ইসলাম বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কম্প্রেসরের মতো ভারি প্রযুক্তি পণ্য আউটসোসিং করে থাকে। তাই শুধু বাংলাদেশেই নয়; সারাবিশ্বেই বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে কম্প্রেসর উৎপাদন শিল্পের। এরই মধ্যে, ওয়ালটন কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের প্রোডাক্ট রফতানি হচ্ছে ইউরোপে। নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে দেশী-বিদেশী অন্যান্য রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানেও কম্প্রেসর সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। ওয়ালটন কম্প্রেসরের সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোঃ শাফিউর রহমান বলেন, উন্নতমানের কাঁচামাল দিয়ে সর্বোচ্চ গুণগতমানের কম্প্রেসর তৈরি করছেন তারা। স্থানীয় আবহাওয়া অনুযায়ী তৈরি ওয়ালটনের কম্প্রেসর লো অথবা হাই-ভোল্টেজেও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে। নয়েজ লেভেলও অনেক কম। নিজেদের কারখানা সর্বোচ্চমানের কম্প্রেসর তৈরি করায় ওয়ালটন ফ্রিজের কম্প্রেসরে দেয়া হচ্ছে ১২ বছরের গ্যারান্টি সুবিধা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই স্থানীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক শুল্ক ও নীতি সহায়তা প্রদান করে সরকার। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ প্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। সরকারের সহায়ক নীতি ও কিছু স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তার সমন্বয়ে দেশ আজ ফ্রিজ, টেলিভিশন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাদের বিশ্বাস- কম্প্রেসর উৎপাদনে সরকারের কাছ থেকে সহায়ক শুল্ক ও নীতি সহায়তা পেলে এ শিল্পও দেশের উন্নয়নে এবং ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
×