ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু চলচ্চিত্র

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১ মার্চ ২০১৯

শিশু চলচ্চিত্র

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। আর দেশের এই ভাবী কর্ণধারদের ছোট থেকে বেড়ে ওঠা, নিজেকে গড়ে তোলা যেমন পরিবারের জন্য অত্যন্ত জরুরী একইভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিতে এর অবদান কোন অংশেই কম নয়। একজন অবোধ, অপ্রাপ্ত শিশু তার শৈশবকাল অতিক্রম করে বাবা-মার স্নেহে, পারিবারিক ছায়ায়। আর সমাজ সংস্কারের প্রচলিত মূল্যবোধ তাদের চলার পথকে এগিয়ে নেয়, যথার্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। এক সময় বই ছিল শিশু কিশোর থেকে আরম্ভ করে অন্য অনেকের বিনোদনের মূল শক্তি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান তথ্য প্রযুক্তির বিকাশমান যুগে হাতের মুঠোর সেই আকর্ষণীয় বস্তুটি সব মানুষের মনকে এক প্রকার জয় করে নিয়েছে। ফলে জ্ঞানের পরিধি বিস্তারের চাইতে চলমান সময়ে তথ্য সংযোগের যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিশু থেকে শুরু করে উদীয়মান কিশোর, তরুণ এবং যুবকদের আবিষ্ট করে রাখে সেখানে উপাত্ত সন্ধানই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ফলে স্বল্প সময়ে অনেক কিছু জানার যে আগ্রহ আর আনন্দ সেটা সবচাইতে বেশি বিমোহিত করে শিশুদের। সঙ্গত কারণে শিশুদের জন্য অন্য বিনোদনের ব্যাপারটি এখন বিদগ্ধ মহলকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলছে। এমন কোন সুস্থ নান্দনিক চর্চা যা তাদের মানসিক বিকাশকে স্বচ্ছতায় এগিয়ে দেবে, সুপ্ত শৈল্পিক সুষমাকেও জাগিয়ে তুলতে প্রভাবকের কাজ করবে ভাবার অবকাশেই শিশু চলচ্চিত্রের ব্যাপারটি সামনে এসে যায়। ফলে যাত্রা শুরু হয় ‘চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটির’। লক্ষ্য কেবল শিশুদের দিয়ে ছবি বানানো নয়- বরং তাদের চৈতন্যের শুদ্ধতায় নান্দনিক সূচকগুলোর নিয়মিত চর্চা এবং অনুশীলন। যা কোন শিশুকে শুধু সুস্থ বিনোদনে আবিষ্ট করবে না, তার চেয়েও বেশি একজন অপরিপক্ব শিশুর মানবিক আর মানসিক গড়নকেও নানা মাত্রিকে স্পর্শকাতর করে তুলবে। ২০০৭ সাল থেকে শিশুদের জন্য নবগঠিত এই বিনোদন প্রতিষ্ঠানটি উৎসব আর আয়োজনে প্রতি বছর শিশু ছবি নির্মাতাদের নিয়ে অনুষ্ঠানের যে যাত্রা শুরু করে এ বছর তা ১২তম অবস্থানে পৌঁছেছে। ২ মার্চ শনিবার শিশুদের নিয়ে ‘চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি’র ১২তম সপ্তাহব্যাপী আয়োজন শুরু হবে। শিশুদের নিয়ে করা হলেও এর ব্যাপক প্রস্তুতি নজরকাড়া। কারণ শুধু বাংলাদেশের শিশুদের জন্য এত মহৎ আয়োজন নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও অন্য দেশের ব্যাপারে এর পরিধি সম্প্রসারিত। সেলুলয়েডের পর্দায় দৃশ্যমান হয় দেশ-বিদেশের শিশুদের নির্মিত ছবি। ছবি দেখার ভেন্যুতে শিশুদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদের জন্যও অনুষ্ঠানের দ্বার উন্মোচন করা থাকে। এবারের আয়োজনে প্রদর্শিত হবে ৩২টি দেশের ১৭৯টি চলচ্চিত্র। ছবি দেখার হলগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শিশুদের নির্দেশিত ও পরিচালিত ছবি বিদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্থান পাচ্ছে, যা আমাদের কঁচি-কাঁচাদের জন্য এক মহৎ অর্জন। তাদের নির্মিত ছবি যখন বিশ্বসীমায় সমাদৃত হয় তখন শিশুদের আস্থা বাড়ে, আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয় সর্বোপরি তার সৃজন দ্যোতনা পরিপুষ্ট হয়। এবারের আয়োজনের মূল উৎসব কেন্দ্র সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন। ১২তম এই উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ শিশুদের নির্মিত ছবি প্রতিযোগিতা বিভাগে বাছাই করা ২৫টি ছবি থেকে সেরা ৫ ছবিকে পুরস্কৃত করা হবে। আর এই বাছাই পর্বের বিচারকও শিশুরাই। অর্থাৎ শিশু-কিশোররাই তাদের ছবি বিচারকের আসন অলঙ্কৃত করে শ্রেষ্ঠত্বের স্থান নির্ধারণ করবে। শিশু-কিশোরদের জন্য এক অভাবনীয় শৈল্পিক দ্যোতনা যেখানে তারা একে অপরের প্রতিযোগীই শুধু নয়, বিচারকও বটে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিনোদন শিল্পে এমন মহিমান্বিত আয়োজন আগামী প্রজন্মের জীবন ও চৈতন্যের বিকাশে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশমান এমন সুবর্ণ সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো আর এক শৈল্পিক ও সৃজন কর্মযোগ শিশুদের মননশীল চর্চাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে।
×