ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতার মাস

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১ মার্চ ২০১৯

স্বাধীনতার মাস

স্বাধীনতার মাস মার্চ। আমাদের কাছে এই রক্তঝরা মার্চ মাসের রয়েছে এক অন্যরকম আবেদন। এটি অগ্নিঝরা ইতিহাসের মাস, বিষাদ ও বেদনার মাস। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য- যার নাম বাংলাদেশ। বাঙালীর জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারির পর মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। একাত্তরের গোটা মার্চ মাসই ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই মার্চেই। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বজ্রনিনাদ ঘোষণার পরই এ দেশের মানুষের বুঝতে বাকি রইল না যে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে আর দেরি নেই। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশও ঘোষিত হয় তাঁর বজ্রকণ্ঠে। পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। এ দেশের তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সেদিন এই একটি কণ্ঠের মন্ত্রমুগ্ধে আবিষ্ট হয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্বাধীনতা এবং মুক্তির ঐকতানে জাতি এক হয়। এরই মধ্যে নানা কূটকৌশল চালাতে থাকে তৎকালীন পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও শাসকগোষ্ঠী। প্রথমেই তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকে সময়ক্ষেপণ। এভাবেই আসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি। পাকবাহিনী ভারি অস্ত্র, কামান, সাঁজোয়া যান, ট্যাঙ্ক নিয়ে অপারেশন সার্চলাইট নামে এ দেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মেতে ওঠে নির্মম হত্যাযজ্ঞে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা, শাঁখারীবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হামলা চালায়। সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম। অসীম ত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান বাঙালীকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালী তার মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হয়। চির অম্লান সেইসব দিন। তবে পঁচাত্তর পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নষ্ট রাজনীতি আর একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের পুনরুত্থানের কারণে দেশে সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের কালো ছায়ার বিস্তার ঘটে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম এখন উজ্জীবিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আজ পহেলা মার্চ। জাতির কাছে মার্চ মাস এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উদ্গিরণকারী মাস। এই মাসেই জাতি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। এ বছর স্বাধীনতার ৪৮ বছর পূর্ণ হবে। আমরা আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই বীর শহীদদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের মূল্যবান জীবন দান করে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
×