ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া হিসেবে অভিযোগ

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ সোনারগাঁ উপজেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আবারও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ করে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের হয়রানি করছে সেই পুরনো একই চক্র। এমনকি পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে (বীরপ্রতীক) সভাপতি করে গঠিত সোনারগাঁও উপজেলার সাত সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির স্বাক্ষরিত দাখিল করা প্রতিবেদনটিও বিতর্কিত করার জন্য তৎপর হয়েছে ওই চক্রের সদস্যরা। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আগামী ২৬ মার্চ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দেয়ার পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ এনে হয়রানির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন বয়োবৃদ্ধ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। জানা গেছে, ২০১৭ সালে সোনারগাঁয়ের ১৬৩ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করেছিল ওই একই চক্র। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমান পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) কে সভাপতি ও সোনারগাঁও উপজেলার ইউএনওকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যের একটি যাচাই -বাছাই কমিটি গঠন করা হয়, যার সদস্য ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) প্রতিনিধি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। অভিয্ক্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যেকের সাক্ষাতকার গ্রহণ, আবেদনপত্র জমা নেয়াসহ মুুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সপক্ষের যাবতীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করাসহ জমা নেয়া হয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেন, সোনারগাঁও উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি এসব অভিযোগের সত্যতা সরেজমিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার নিয়ে যাচাই বাছাই করে কোন সত্যতা না পেয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করে স্বাক্ষরদান করেন, যা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং সেই তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে এসব এখন সংরক্ষিত থাকার কথা। পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটির কাছে ১৬৩ মুক্তিযোদ্ধার কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বাক্ষর সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে। সোনারগাঁ উপজেলার তৎকালীন ইউএনও শাহীনুর ইসলামের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসে পাঠানোসহ সোনারগাঁও উপজেলা অফিসে সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, ২০১৭ সালে যেই চক্রটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ করেছিল এখন আবার সেই একই চক্র একই অভিযোগ করছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ও জাতীয় কাউন্সিলে। ২০১৭ সালে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রমাণিত ও নিষ্পত্তি হওয়ার বিষয়টিকে আবারও বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছে ওই চক্রটি। এতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রতিনিধিদেরও প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ফলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকেই অস্বীকার ও অপমান করার শামিল বলে মনে করেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা। সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার আগামী ২৬ মার্চের আগে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো যেমন অপরাধ, তেমনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বানানো একই ধরনের অপরাধ। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে হয়রানি করে যে বা যেই চক্রই চাঁদাবাজি করার অভিযোগ এসেছে তার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনির দাবি।
×