ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

না ফেরার দেশে ক্রিকেট কোচ সৈয়দ আলতাফ হোসেন

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

না ফেরার দেশে ক্রিকেট কোচ সৈয়দ আলতাফ হোসেন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের স্বনামধন্য ক্রিকেট কোচ সৈয়দ আলতাফ হোসেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সাবেক এ ক্রিকেটারের মৃতুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। রাতে শরীর খারাপ হওয়ার পর হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নেপথ্যের এক নায়ক। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পাওয়া প্রথম বাঙালী ক্রিকেটার ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ক্রিকেট কোচ হিসেবেও ছিলেন ভীষণ সফল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের কারিগর তিনি। বুধবার বাদ যোহর মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা হয় নাজিমউদ্দিন রোডের হোসেনী দালান মসজিদে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এরপর তাকে ঢাকার হোসেনী দালানে সমাহিত করা হয়। ১৯৩৮ সালে আলতাফ হোসেনের জন্ম অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই ভাইকে হারানোর পর মাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর একসময় এদেশে ক্রিকেটের মহীরুহ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। খেলোয়াড়ী জীবনে আলতাফ হোসেন ছিলেন পেসার, তবে ব্যাটিংয়ের হাতও মন্দ ছিল না। ১৯৫৪ সালে কায়েদে আজম ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু। এরপর খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লিউডি, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগর ক্লাবে। ক্রিকেটের পাশাপাশি একসময় ফুটবল খেলেছেন ঢাকার তৃতীয় বিভাগে, দাপটের সঙ্গে খেলেছেন বাস্কেটবলও। তবে শেষ পর্যন্ত থিতু হন ক্রিকেটেই। ১৯৬৫ সালের মার্চে আসে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মাহেন্দ্রক্ষণ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাক পান পাকিস্তান টেস্ট দলে। জায়গা পান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। খেলার সুযোগ যদিও পাননি, বাইরেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান দলের অন্যতম ভরসা হয়েছিলেন তিনি। টুকটাক ক্রিকেট খেলে গেছেন ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। খেলেয়াড়ী জীবনেই ১৯৭০ সালে শুরু করেন আম্পায়ারিং। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার হয়ে পরিচালনা করেছেন প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিযুক্ত হন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ। পরে কোচ হিসেবে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যান যে, তার খেলোয়াড়ী জীবনও অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে কোচ হিসেবে সাফল্যে। যাদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশের মাঠের ক্রিকেট, তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ভারতের পাতিয়ালায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে কোচিং কোর্স করে আসা বাংলাদেশের প্রথম কোচ তিনি। পরে কোচিং কোর্স করে এসেছেন ইংল্যান্ড থেকেও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৭৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। আশির দশকে অনেকবারই বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯০ এশিয়া কাপেও ছিলেন বাংলাদেশ দলের ডেপুটি ম্যানেজার কাম কোচ। ‘এ’ দল ও বয়সভিত্তিক দলগুলোর দায়িত্বে ছিলেন অনেকবার। বাংলাদেশে মহিলা ক্রিকেট চালুর অন্যতম অগ্রদূতও আলতাফ হোসেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা আবাহনী দল নিয়ে গেছেন কলকাতায়। ১৯৯৭ সালে তাকেই মহিলা দল গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয় বিসিবি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে চেষ্টা করেছেন মহিলা ক্রিকেটের ভিত শক্ত করার। ১৯৯৯ সালে পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। দেশের ক্রীড়ার সর্বোচ্চ এই স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন তিনিই। ২০০৯ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর কোমায় ছিলেন প্রায় ২৪ ঘণ্টা। সে যাত্রায় ফিরে এলেও শরীরে বাসা বেঁধেছিল নানা ব্যাধি। শেষ পর্যন্ত অমোঘ নিয়তি মেনে নিতেই হলো। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলতাফ হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। মঙ্গলবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন বহু ক্রিকেটার গড়ার কারিগর সৈয়দ আলতাফ হোসেন।
×