ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাকিব-মুশফিকের দলে না থাকা অনেক বড় ক্ষতি’

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘সাকিব-মুশফিকের দলে না থাকা অনেক বড় ক্ষতি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাকিব আল হাসান প্রথম টেস্ট খেলবেন না। তা আগেই জানা। তৃতীয় ওয়ানডের পর জানা গেল মুশফিকুর রহীমও প্রথম টেস্ট খেলতে পারবেন না। বিপিএলের ফাইনালে বাঁ হাতের অনামিকায় চোট পান সাকিব। তাতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারেননি। টেস্ট সিরিজও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। তৃতীয় ওয়ানডের আগে পাঁজরে ব্যথা অনুভব করেন মুশফিক। ম্যাচটি খেললেও সেই ম্যাচেই আঙ্গুলে ব্যথা পান। তাতে প্রথম টেস্ট খেলা হচ্ছে না মুশফিকের। এমন অবস্থায় দলের যে কি কাহিল অবস্থা তা বোঝাই যাচ্ছে। আজ ভোর চারটায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে বুধবার সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের পরিবর্তে টেস্টে অধিনায়ক থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুই ক্রিকেটারের না থাকায় আক্ষেপ করলেনও। বললেন, ‘সাকিব-মুশফিকের দলে না থাকা অনেক বড় ক্ষতি।’ মাহমুদুল্লাহ জানালেন, ‘সাকিব-মুশফিকের দলে না থাকা অনেক বড় ক্ষতি। তারা আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু যারা তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাবেন তাদেরও দু’হাত ভরে অভিজ্ঞতা নিতে হবে ও নিজেদের প্রমাণ করতে হবে।’ সঙ্গে দল নিয়ে জানান, ‘সব সময়ই আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ থাকে দেশের বাইরের কন্ডিশনে আমরা কেমন করি। এমন কন্ডিশনে আমরা টেস্ট ম্যাচ জিততে পারব কিনা, সবার ভেতরেই এই সংশয় থাকে। তবে অধিনায়ক বা ক্রিকেটার হিসেবে আমি মনে করি আমাদের মধ্যে ওসব বিষয়গুলো কাজ করে না। আমার মনে হয় ওদের (নিউজিল্যান্ড) বোলারদের সম্পর্কে আমাদের এখন একটা ধারণা হয়েছে, এখন কথা হচ্ছে আমরা নিজেদের কিভাবে তৈরি করতে পারি। আমরা মানসিকভাবে নিজেদের তৈরি করেছি।’ নিউজিল্যান্ড সফরে এবার নেই কোন টি২০ ম্যাচ। ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচই শুধু আছে। দুই সিরিজেই তিনটি করে ম্যাচ। ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে, তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৮৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে মাশরাফিবাহিনী। বরাবরের মতো নিউজিল্যান্ডে এবারও গিয়ে কোন ওয়ানডেই জেতা হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১২টি ওয়ানডে হার হয়েছে। চারটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এবার টেস্ট সিরিজে কী কোন ভাল ফল মিলবে? নিজ দেশে নিউজিল্যান্ড যে রকম দল, আর বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ওয়ানডেতে যে ব্যর্থতা দেখিয়েছেন তাতে হতাশাই সামনে চলে আসছে। তবে যে কোন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের আছে। সেই চেষ্টায় এখন সাফল্য মিলে গেলেই হলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। একটি টেস্টও জিততে পারেনি। তবে তিনটি টেস্টে ড্র করেছে। তিনটিই বাংলাদেশের মাটিতে। ২০০৮ সালে ও ২০১৩ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া টেস্ট দুটি বৃষ্টিতে ড্র হয়। তবে ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হওয়া টেস্টটিতে বাংলাদেশ তুমুল লড়াই করে। শেষ পর্যন্ত ড্রও করে। এছাড়া ১০টি টেস্টেই হারে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ টেস্টের ৩টিতেই ড্র ফল মিলেছে। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা ৭টি টেস্টের একটিতেও জেতা যায়নি। তবে ২০০১, ২০০৮, ২০১০ সালের টেস্টগুলোতে যেভাবে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ, ২০১৭ সালে গিয়ে সেই হারের ব্যবধান কমেছে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশও টেস্টগুলোতে দাপট দেখিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হার এড়ানো যায়নি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টেতো বাংলাদেশ দলই জেতার আশা জাগায়। প্রথম ইনিংসে সাকিবের ২১৭ ও মুশফিকের ১৫৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ৫৯৫ রান করে ইনিংসও ঘোষণা করার সাহস দেখায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিক মিলেতো নিজেদের ইতিহাস সেরা ৩৫৯ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারায় পঞ্চমদিনের শেষ সেশনে গিয়ে হারে বাংলাদেশ। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজটিতে দারুণ খেলে বাংলাদেশ। তবে এ পর্যন্ত চারবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়ে শুধুই হার হয়েছে। ২০০১ সালে দুই ম্যাচের সিরিজ, ২০০৮ সালে দুই ম্যাচের সিরিজ, ২০১০ সালে এক ম্যাচের সিরিজ ও ২০১৭ সালে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলে হারে বাংলাদেশ। প্রতিবারই হোয়াইটওয়াশ হয়। এবার আবার দলে নেই সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তাতে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রথম টেস্টে মিঠুন ও মুশফিকও না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। মিঠুন শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেন। তবে সাকিবের সঙ্গে মুশফিক থাকছেন না। আবার মুস্তাফিজুর রহমানকেও বিশ্রামে রাখা হতে পারে। তাতে করে আরও বেহাল হয়ে যাবে বাংলাদেশ দল। তবে সাকিব-মুশফিকের না থাকাটাই দলকে বেশি ভোগাতে পারে। তাইতো মাহমুদুল্লাহর কণ্ঠে এ দুই ক্রিকেটার না থাকার হতাশা যোগ হয়েছে।
×