ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিপিন্সকে দশ গোলের মালা উপহার দিল বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফিলিপিন্সকে দশ গোলের মালা উপহার দিল বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ ইন্টারনেটে ম্যাচের ফল জেনে এক রসিক বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমী তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এই লিখে, ‘আরেকটি গোল বেশি করলেই তো বিপক্ষ দলের একাদশ প্রত্যেকেই ভাগে করে একটা গোল পেত!’ অথচ খেলা শুরুর আগেও কেউ ধারণা করেননি এত ভাল খেলবে বাংলাদেশ, আর এত গোল দেবে। ধারণা করার প্রশ্নই ওঠে না, কেননা প্রতিপক্ষ যে অচেনা। তাই হেরে যাবার বা পয়েন্ট হারানোর একটা শঙ্কা ছিলই। কিন্তু মাঠের খেলায় সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। বেশি না, প্রতিপক্ষকে গুনে গুনে ‘দুই হালি প্লাস’ দুই গোল উপহার দিয়েছে তারা, ফিলিপিন্সকে হারিয়েছে ১০-০ গোলে। বিশাল এ জয়ে একাই হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছে স্ট্রাইকার তহুরা খাতুন। জোড়া গোল করেছে আনুচিং মগিনি। এছাড়া ১টি করে গোল করেছে শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং মারিয়া মান্দা। আরেকটি গোল হয়েছে আত্মঘাতী। খেলার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৬-০ গোলে। এর ফলে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (রাউন্ড-২) শুভসূচনা করলো বাংলার বাঘিনীরা। বুধবার মান্দালয়ের মান্দালার থিরি স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় যখন বাংলাদেশ দল মাঠে নামছে তখনও বোঝা যায়নি একটু পরে কি হতে যাচ্ছে। পরে যতই সময় গড়িয়েছে ততই যেন বারুদ ঠিকরে ঠিকরে বেরিয়েছে বঙ্গকন্যাদের বুট থেকে। এভাবেও বলা যায়Ñ বঙ্গকন্যারা যেন ফুটবল খেলা শেখালো ফিলিপিনো কন্যাদের। প্রথম ম্যাচেই র্দুদান্ত জয়ে প্রতিপক্ষকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে এই আসরের চূড়ান্তপর্বে ওঠার পথে এক পা বাড়িয়ে রাখলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এই পর্বে দুই গ্রুপ থেকে সেরা ও রানার্সআপ দল খেলবে চূড়ান্তপর্বে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় আছে স্বাগতিক থাইল্যান্ড, গত আসরের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় স্থান অধিকারী জাপান। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মূলপর্ব। বাছাইয়ের দ্বিতীয়পর্বে বাংলাদেশ খেলছে ‘বি’ গ্রুপে। অন্য দুই প্রতিপক্ষ চীন ও স্বাগতিক মিয়ানমার। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামী ১ মার্চ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক মিয়ানমার। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাছাইয়ের প্রথমপর্বে বাহরাইন, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনামকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয়পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। বুধবারের ম্যাচে ফিলিপিন্স রীতিমতো অসহায় ছিল বাংলাদেশের সামনে। তাদের অবস্থা ছিল অনেকটা এ রকম, ‘ছেড়ে দে বোন, কেঁদে বাঁচি।’ নিয়মিত বিরতিতেই একের পর এক গোল করে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছিল মারিয়া বাহিনী। মাত্র ২ মিনিটেই গোলের ‘হালখাতা’ উদ্বোধন করে বাংলাদেশ। শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্রসে প্লেসিং শটে বল জালে পাঠায় শামসুন্নাহার জুনিয়র। যদিও দেখে মনে হয়েছিল গোলটা তহুরা খাতুনের। শেষ পর্যন্ত অফিসিয়াল ঘোষণা গোলদাতা তহুরার (১-০)। ১৭ মিনিটে মারিয়া মান্দার বাড়ানো বলে আগুয়ান গোলরক্ষক বল ধরতে পারেনি। তহুরার শট চলে যায় জালে (২-০)। ১৮ মিনিটে মারিয়া মান্দার কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে শামসুন্নাহারের (জুনিয়র) হেড গোলরক্ষক লাফিয়ে ওঠেও ধরতে পারেনি (৩-০)। ২৪ মিনিটে সতীর্থের ক্রসে তহুরার হেডের বল চলে যায় প্রতিপক্ষের জালে (৪-০)। ৩৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে শামসুন্নাহারের ক্রসে প্লেসিং শটে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে তহুরা (৫-০)। ৪২ মিনিটে বাংলাদেশের এক ডিফেন্ডারকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেয় ফিলিপিন্সের এক খেলোয়াড়। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে গোল করে শামসুন্নাহার সিনিয়র (৬-০)। বিরতির পরও সমানতালে খেলে লাল-সবুজরা। তবে এই অর্ধে চারটির বেশি গোল পায়নি। যদিও গোলের সুযোগ পেয়েছিল এরচেয়েও বেশি। ৪৬ মিনিটে স্কোরশিটে গোল করে নিজেদের নাম ওঠায় ফিলিপিন্স। তবে সেটা আত্মঘাতী। গোলটি করে তাদের ফরোয়ার্ড মিকেলা ভিলাসিন (৭-০)। ৫৮ মিনিটে বাংলাদেশের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসে ফিলিপিনো গোলরক্ষক মারগ্রেথি থান। সে সুযোগ কাজে লাগায় আনুচিং মগিনি (৮-০)। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে মারিয়া মান্দার গোলটি ছিল অসাধারণ। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক-সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের নেয়া শটটি ফিলিপাইন গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ায় (৯-০)। ৮৬ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের দশম গোলটি করে আনুচিং। এবারও ফিলিপাইন গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগ কাজে লাগায় এই পাহাড়ীকন্যা। শেষ পর্যন্ত ১০-০ গোলের তৃপ্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বঙ্গকন্যারা। ফিলিপিন্স ম্যাচে এতটাই দুর্বল ছিল যে তারা একবারও বল নিয়ে বাংলাদেশের বক্সের কাছাকাছিও আসতে পারেনি। ফলে বেশ অলস সময়ই কাটাতে হয় বাংলাদেশের গোলরক্ষক রূপনা চাকমাকে। দলের সঙ্গে নেই ম্যানেজার বাবু ॥ এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (রাউন্ড-২) খেলতে এখন মিয়ানমার অবস্থান করছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দল। তবে দায়িত্বজ্ঞানহীন কা- ঘটিয়ে রহস্যজনকভাবে দলের সঙ্গে সেখানে যাননি ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। জানা গেছে, তিনি দেশেই আছেন। ব্যস্ত নিজের ব্যবসা ও মোহামেডান ক্লাবের ম্যানেজারি নিয়ে। তার মানে দেশ বা জাতীয় দলের চেয়েও তার কাছে ক্লাব বা ব্যক্তিগত কাজই বড়। এর আগেও তিনি এমন কা- করেছেন। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছেড়ে ব্যস্ত ছিলেন অন্য কাজে। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এ জন্য তাকে আগেও যেমন সতর্ক করেনি বা শাস্তি দেয়নি, তেমনি এবারও করবে কি না সন্দেহ আছে। ‘প্রচারের কাঙাল’ এই বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি নিজের চেহারা ও ছবি মিডিয়ায় দেখাতে ‘অসাধু পন্থা’ অবলম্বন করেন।
×