ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ক্লিন ইমেজ তৈরিতে শুরু হচ্ছে নার্সিং প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলিশের ক্লিন ইমেজ তৈরিতে শুরু হচ্ছে নার্সিং প্রক্রিয়া

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যাতে অপরাধে জড়িত না হয় এবং ‘ক্লিন ইমেজ’ তৈরি করা যায় সেই জন্য ‘নার্সিং’ নামের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর। বিগত ১ বছরে নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যকে। গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য। গত ৫ বছরে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে ৭৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘গুরু দ- ও লঘু দ-’-দুই ধরনের শাস্তির বিধান চালু আছে পুলিশ প্রশাসনে। পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদস্যদের কেউ কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সতর্ক করে দিয়েছেন পুুলিশপ্রধান আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুলিশ সদস্য যারা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে শাস্তি দেয়া হয়েছে ১০১২ জনকে। শাস্তি দেয়া ছাড়াও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৬১ পুলিশ সদস্যকে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ক্লিন ইমেজ তৈরি করার জন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে শাস্তি প্রদান ছাড়াও নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের দাবি, সময় বদলেছে, অপরাধ করে কারও পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই- এই ধরনের কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার ২ পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ডাকবাংলোতে আটকে রেখে তরুণীকে জোর করে ইয়াবা সেবন করিয়ে ধর্ষণ করে তারা নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তরা হচ্ছে সাটুরিয়া থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে মারধর, হত্যার হুমকি ও চাঁদার দাবিতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদারকে প্রত্যাহার করা হয়। সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে প্রত্যাহার এবং উপ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির কারণে এই শাস্তি দেয়া হয়। এছাড়াও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে আলোচিত ডিআইজি মিজানকেও প্রত্যাহার করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণের নজিরও বিদ্যমান। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচ আর এম) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায়-দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান নেবে না। অপরাধীকে পুলিশ সদস্য হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষাধিক। এর মধ্য থেকে কতিপয় লোক নানা অপকর্মে জড়িয়ে বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ করে এটা আমরা ভালভাবে নেই না। যিনি অপরাধ করেন তাকে আমরা অপরাধী হিসেবেই ট্রিট করি এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করি। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ বাহিনীতে গত ৫ বছরে ৭৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে অপরাধ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের শাস্তি হয়েছে। এদের বেশিরভাগেরই শাস্তি হয়েছে কর্তব্যচ্যুতিসহ নানা লঘু অভিযোগে। পুলিশের কোন সদস্য কিংবা কর্মকর্তা ফৌজদারি অপরাধ করলে তাকে বাহিনী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মামলা দায়ের করে বিচারে সাজা নিশ্চিত করা হয়। ফৌজদারি অপরাধের বাইরে বাহিনীর নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি দেয়া হয়। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে গ্রেফতার ও জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং চাকরিচ্যুত করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া সেলের এআইজি মোঃ সোহেল রানা বলেন, পুলিশ বাহিনীতে নানা ধরনের শাস্তি বিধান রয়েছে। অধর্তব্য অপরাধের জন্য লঘু দ- এবং ধর্তব্য অপরাধের জন্য গুরুদ- প্রদান করা হয়। লঘুদ-প্রাপ্তদের ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন, পোস্টিংসহ নানা ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আর গুরুদ-প্রাপ্তরা বাহিনী থেকে বহিষ্কার, জেল-জরিমানা ভোগ করতে হয়। শুধু শাস্তি দিয়ে অপরাধ কমানো যাবে না। যে কারণে অপরাধ হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর জন্য পুলিশ বাহিনী নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার জন্য চেষ্টা করছে।
×