ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস

দেশে ডায়াবেটিক রোগী ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও এক লাখ

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশে ডায়াবেটিক রোগী ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও এক লাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী হয়ে উঠছে। বিশ্বে ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪১ কোটি। দেশে প্রায় ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। শুধু ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয়। বিশ্বের সর্বত্র বয়সী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ও ওইসব রোগের আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে ডায়াবেটিস। কেবল ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে পারলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতেই বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ৬৪ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, স্বাস্থ্য শিক্ষাই যার প্রধান চিকিৎসা। যথাযথ স্বাস্থ্য শিক্ষা পেলে একজন ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে এ রোগ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। সারাবিশ্বেই ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির হার বেশি। ডায়াবেটিস সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করছে অসংখ্য মানুষ। তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিসে মোট আক্রান্তের শতকরা ৫ ভাগ আক্রান্ত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে। এই প্রকার ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা ইনসুলিন ছাড়া বাঁচতে পারেন না। তাদের ইনসুলিন প্রাপ্তি মানবাধিকার হয়ে দাঁড়ায়। ডায়াবেটিক সমিতির মাধ্যমে প্রতি বছর দেশের গরিব রোগীদের জন্য ৯ কোটি ইনসুলিন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এরপরও ইনসুলিন পান না টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শত শত রোগী। গরিব রোগীদের পক্ষে বছরের পর বছর ধরে ইনসুলিন গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারসমূহে সরকারী উদ্যোগে স্বল্প খরচে ইনসুলিন সরবরাহ এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, যা সুনিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগীর হৃৎপি-, কিডনি ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগই জানেন না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। তাই বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা দরকার। সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারেন। ঘন ঘন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এক পর্যায়ে অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ডায়াবেটিস। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাডাস বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাডাস কর্পোরেটভিত্তিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচীর অধীনে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বল্প মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়া হবে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑ ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে যাতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়া উচিত। স্কুল কলেজে খোলা মাঠ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এককভাবে না পারলেও কয়েকটি স্কুল বা কলেজ যাতে সম্মিলিতভাবে একটি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে সে ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। টিভি-রেডিও-সংবাদপত্রে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বা স্লোগান প্রচারের ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকাভিত্তিক ওয়াকিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব ইত্যাদি গড়ে তোলা উচিত। গৃহায়ন কর্মসূচীর অনুমতি দেয়ার সময় হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা ও খেলাধুলার জন্য কিছুটা জায়গা রাখার বিধান রাখা যেতে পারে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে (যেমন মসজিদে খুতবার সময়) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বক্তৃতা করার ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর মোবাইল অপারেটররা যাতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক সংক্ষিপ্ত বার্তা (এসএমএস) পাঠাতে অন্তত ৩০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন আরও জানান, ডায়াবেটিস রোগী এমন ব্যাপকহারে বৃদ্ধির জন্য দায়ী মূলত জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, বার্ধক্য ও প্রবীণদের সংখ্যাবৃদ্ধি, নগরায়ন এবং তার বিভিন্ন প্রভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। এ রোগ শিশু-কিশোরদেরও হতে পারে।
×