ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়নের বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ক না করার অভিযোগ জাতিসংঘের বিরুদ্ধে

ভূমিকা তদন্ত হবে

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভূমিকা তদন্ত হবে

মিয়ানমারে গত দশকে জাতিসংঘের কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত করছে সংস্থাটি। কারণ দেশটিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর আগে সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ক না করার অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের সূত্রগুলো গার্ডিয়ানকে নিশ্চিত করেছে যে, চাপ অনুভব করায় সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতিসংঘে গুয়েতেমালার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ট রোজেনথালকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হবে। তিনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃত্ব দেবেন। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্ট্যানিসলাভ স্যালিং বলেন, ‘এই তদন্ত বা পর্যালোচনা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে নয়। এটি মূলত জাতিসংঘ ভবিষ্যতের জন্য এ বিষয়ে সম্ভাব্য কী শিক্ষা পেল সে বিষয়টি ঘিরে। এই তদন্ত করতে গিয়ে রোজেনথালের মিয়ানমারে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই বলেও তিনি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের জন্য রোজেনথালকে মনোনীত করা হয়েছে এ কারণে যে, জাতিসংঘের কার্যক্রমে তিনি খুবই কঠোর এবং অভিজ্ঞ। তিনি সংস্থাটিকে খুব ভালভাবে চেনেন। আর তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি যেটা ভাল বোঝেন সেটাই করবেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে দমন-নিপীড়ন চলে তার কয়েক মাস আগে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে কয়েকবার আহ্বান জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মিয়ানমারের রাখাইনের সহিংসতাকে জাতি নিধন ও সম্ভাব্য গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, হাজার হাজার লোককে হত্যা এবং শিশু ও নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মিয়ানমারে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান বলেন, রাখাইনে গত বছরের শেষ দিকেও গণহত্যা চলে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক একটা দিক যে, মিয়ানমার সঙ্কট মোকাবেলায় জাতিসংঘ কী ভুল করেছে, সে বিষয়টা নিয়ে তারা তদন্ত করছে। তিনি আরও বলেন, জাতিগত নিধন অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে বার্মিজ সামরিক বাহিনী একটা সুযোগ খুঁজছিল- যা ২০১৭ সালের আগস্টের আগেই অন্য অনেকের মতো আমাদের কাছেও পরিষ্কার ছিল। কিন্তু জাতিসংঘ সেটা বুঝতে এবং বিশ্বকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন সম্প্রতি উল্লেখ করে যে, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বার্মিজ সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টার ইয়াংহি লি কয়েকমাস আগে সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে যেসব সুপারিশ পাঠান, সেগুলো পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান। লি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘জাতিসংঘের এই পর্যালোচনা হতে হবে স্বাধীন এবং সেটা শেষ হলে তা প্রকাশ করতে হবে। তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ আছে যে, এই তদন্ত হবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সীমিত পরিসরে। আর এটাও পরিষ্কার নয় যে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কী না।
×