ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্সে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনে বামদের প্রাধান্য

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফ্রান্সে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনে বামদের প্রাধান্য

ফ্রান্সকে ভূতে তাড়া করছেÑ উজ্জ্বল হলদে রঙের ভেস্ট পরা ভূত। এদের দেখা মেলে মোটরওয়ের টোলগুলোতে, বড় বড় নগরীর চৌরাস্তায়, মহাসড়কে, রিফাইনারি, ফেরি ও ডকমুখী সড়কে। মাঝে মাঝে এরা নগরীর কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়ে। সুশৃঙ্খল মিছিল থেকে এরা মাঝে মাঝে মারমুখী হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। ইয়েলো ভেস্টের প্রতীকী রূপ নিয়ে এই গণআন্দোলন ২০১৮ সালের নবেম্বরে শুরু হওয়ার পর এখনও চলছে। এই আন্দোলন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকোর জন্য এ যাবতকালের কঠিনতম সঙ্কট। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন আসলে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের দাবিতে তৃণমূল রাজনৈতিক আন্দোলন। গত বছরের মে মাসে এই দাবিতে অনলাইনে এক আবেদনে প্রায় ১০ লাখ লোক স্বাক্ষর দেয়ার পর ১৭ নবেম্বর থেকে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। এর পেছনে ইন্ধন হিসেবে কাজ করে অক্টোবরের প্রথমদিকের একটি সংবাদ যে সরকার ২০১৯ এর ১ জানুয়ারি থেকে ডিজেল ও পেট্রোলের ওপর কর আরেক দফা বাড়াচ্ছে। তার আগে কয়েক মাসে জ্বালানির দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, সরকারের কর সংস্কারের ফলে মেহনতী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর কর ভারের বেশিরভাগ পড়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে রুদ্রশেষ সঞ্চার করে। তারা ইয়লো ভেস্ট পরে রাস্তায় নামে এবং জ্বালানি কর হ্রাস, সম্পদের ওপর সংহতি কর পুনর্প্রবর্তন, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ম্যাকোর পদত্যাগ ও অন্যান্য দাবি জানায়। ১৭ নবেম্বর প্রথম দিনেই ইয়েলো জ্যাকেট পরে প্রায় ৩ লাখ লোক গোটা দেশের ২০৩৪টি স্থানে রাস্তায় নেমে আসে। ওদের ক্রোধের বহির্প্রকাশ ছিল স্পষ্ট। ২৪ নবেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিবসে বিক্ষোভের মূল দৃষ্টি ছিল নগরীর কেন্দ্রস্থলগুলো। বিক্ষোভ মিছিল হয় লিওন, টুলৌস, লিলো, মন্টপেলিয়ার মাসাই ও অন্যান্য স্থানে। প্যারিসে ৮ হাজার লোক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের পার্শ্ববর্তী স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে সেই বাধা ভেস্তে যায়। এই যে বিক্ষোভের যাত্রা শুরু তা এখনও চলছে। এ পর্যন্ত গোটা দেশে নিহত হয়েছে ১০ জন সিভিলিয়ান। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। এ আন্দোলনের চরিত্র কি, কোন্ ধরনের মানুষ এতে অংশ নিচ্ছে, বামপন্থী ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এতে ভূমিকা কি, দক্ষিণপন্থীরাই বা কি করছে, এটা এমন এক টেকসই আন্দোলনে বিকশিত হতে পারে কি না যার পরিণতিতে ম্যাকোর গোটা প্রকল্পই ভেস্তে যেতে পারে-এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করার সময় এমন আশঙ্কা ছিল যে ফ্যাসিবাদী ফ্রন্ট ন্যাশনালের নতুন নাম বিএসেমবেলমেন্ট ন্যাশনাল (আরএন) ও এর মিত্র ডিবাউট লা ফ্রান্স এতে জোরেশোরে সংশ্লিষ্ট হবে। এই দুই দলের নেতা যথাক্রমে মেরিন লা পেন ও নিকোলাস ডুপন্ট আইগনান দ্রুত বিক্ষোভ স্থলে উপস্থিত হয়ে সমর্থন জানান। সংগঠকদের মধ্যে ও কোন কোন স্থানে চরম দক্ষিণপন্থীদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সামগ্রিকভাবে এই আইন্দোলনে নানা চরিত্রের ও নানা শ্রেণীর মানুষের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। এটা হলো নাগরিকদের অভ্যুত্থান। বিভিন্ন শ্রেণী- পেশা, মত ও পথের ব্যাপকভিত্তিক এই কোয়ালিশনকে সংহত করেছে প্রচলিত ব্যবস্থার ওপর তাদের ক্ষোভ ও পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে তাদের সুতীব্র আকাক্সক্ষা। একজন সংগঠকের ভাষায় : ‘আমরা শুধুমাত্র ইয়েলো ভেস্ট পনা মানুষ নই। আমরা হলাম ক্রুব্ধ নাগরিকবৃন্দ যারা অসন্তোষের আগুনে জ্বলছি।’ সমস্ত হিসাবেই দেখা যায় যে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ‘লা ফ্রান্স ইনসউমাইজ’ নামক দলের সদস্যদেরই প্রাধান্য এবং দলটির অভ্যন্তরে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি। লা ফ্রান্স ইনসউমাইজ (সংক্ষেপে এলএফআই এবং বাংলায় অদম্য ফ্রান্স) একটি বামপন্থী জনতুষ্টিবাদী ও গণতান্ত্রিক-সমাজতন্ত্রী দল। ২০১৬ সালে এটি গঠিত হয়। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের প্রতি এলএফআই সমর্থকদের সমর্থন সবচেয়ে বেশি-প্রায় ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে আর সব দলের মধ্যে গড় সমর্থনের হার ৭৭ শতাংশ, ম্যাকোর নিজস্ব দল লা রিপাবলিক আন মার্চ’-এর ৪১ শতাংশ সমর্থক বলেছে এই আন্দোলন সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত। চলমান ডেস্ক সূত্র : ফ্রন্ট লাইন
×