ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান ছিনতাই চেষ্টায় মামলা, তদন্তে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বিমান ছিনতাই চেষ্টায় মামলা, তদন্তে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টা ও পরবর্তী চিত্র নিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সোমবার গভীর রাতে পতেঙ্গা থানায় ছিনতাই প্রচেষ্টার নায়ক পলাশ আহমদ ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ও আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরণ, ভয়ভীতি সংক্রান্ত আইনে একটি মামলা করেছে। সিএমপি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে (সিপিইউ)। এদিকে, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের গঠিত টিমের তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, বিমান ছিনতাইয়ের অপনায়ক পলাশ আহমদ (২৮) এর লাশ সোমবার গভীর রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার গ্রামের বাড়ি এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। লাশ গ্রহণের আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত পলাশের চাচা দীন ইসলাম বিমান ছিনতাই ঘটনার রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন। পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত উৎপল বড়ুয়া জানিয়েছেন, মামলাটি করেছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ এ সংক্রান্ত এজাহারে বলা হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ছিলেন। ওইদিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টায় কন্ট্রোল টাওয়ার হতে কন্ট্রোলার মনসুর উদ্দিন ও এরোড্রাম সহকারী শংকর দাশ ওয়াকিটকির মাধ্যমে জানান যে, ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-১৪৭) ফ্লাইটটি উড্ডয়নের অনুমান পনের মিনিট পর অজ্ঞাতনামা এক দুষ্কৃতকারী বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় বিমানের পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কথোপকথন ইসিআর-এ স্থাপিত রিসিভারে মনিটরিং হয়। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট সকলকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। তখন এয়ারপোর্ট ম্যানেজার বিমানবন্দরে নিয়োজিত সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা কর্মী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং আনসার সদস্যদের বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং এপ্রোন-এ যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের নেতৃত্বে তিনি (দেবব্রত সরকার)সহ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন রানওয়ে ও এপ্রোনে হাজির হয়। বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে বিমানের উল্লেখিত ফ্লাইটটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর পরই ইমার্জেন্সি ডোর দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুগণ দ্রুত বের হয়ে ফ্লাইটের পাখার উপর অবস্থান করেন। তখন বাংলাদেশ বিমানের জিএসই (গ্রাউন্ড সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারিং) এর সদস্যরা দ্রুত বিমানটিতে সিঁড়ি লাগিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের নামিয়ে আনেন। এরপর পাইলটও নেমে আসেন। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম, র‌্যাব সেভেনের কর্মকর্তাগণ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ, সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে হাজির হন। এরপর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম আক্রান্ত ফ্লাইটটির অভ্যন্তরে অভিযান পরিচালনা করে অজ্ঞাতনামা একজন দুষ্কৃতকারীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফ্লাইটের বাইরে এপ্রোনে নামিয়ে আনে। পরবর্তীতে জানা যায়, উক্ত অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত বিমানে থাকা কেবিন ক্রু সাগর ও অন্য যাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায়, উক্ত বিমানটি উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী ফ্লাইটের মাঝখান থেকে দৌড় দিয়ে সামনে ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। তার কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। উক্ত দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ধংস করে দেবে মর্মে কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের হুমকি দেয়। ফলে বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। উক্ত দুষ্কৃতকারী ওই সময় দুটি পটকাজাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়। এহেন পরিস্থিতিতে বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান করতে থাকে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম পুলিশের নিকট উক্ত অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীর মৃতদেহ হস্তান্তর করে। পতেঙ্গা থানার এসআই (নিরস্ত্র) সুমন দে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থল ও মৃতদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে উক্ত দুষ্কৃতিকারীর নাম মোঃ পলাশ আহমদ (২৮) এবং তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার দুধঘাটা সদরবাড়ি এবং পিয়ার জাহান ও রেনু আক্তারের পুত্র বলে জানা যায়। এমতাবস্থায় উক্ত পলাশ আহমদ বিমানটির পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং এ ঘটনার সঙ্গে তার অপরাপর অজ্ঞাতনামা সহযোগী জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। পলাশ আহমদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত আলামতসমূহ র‌্যাব সেভেন এবং সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিমের হেফাজতে আছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, যাত্রীদের নিরাপদ গন্তব্যস্থলে প্রেরণ, বিমানবন্দরে সুষ্ঠুভাবে ফ্লাইট চলাচল, আবহাওয়াজনিত কারণ এবং নিহত দুষ্কৃতকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে এজাহার দাখিলে বিলম্ব হয়েছে। এদিকে, পতেঙ্গা পুলিশের তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধ আইন, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ বিস্ফোরণ, ভয়ভীতি সংশ্লিষ্ট সংশোধনী আইনে পলাশ আহমদ ও অজ্ঞাতানামাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হলো। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ পুলিশ কমিশনার এ মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মামলার পর চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পক্ষে ইন্সপেক্টর রাজেশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
×