ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেরাকর্মী পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সেরাকর্মী পুরস্কার

প্রস্তাবিত উদ্যোগটিকে প্রেরণাদায়ক ও প্রণোদনামূলক বলে অভিহিত করার মাঝে রয়েছে শুদ্ধাচারের ভূমিকা। আর অভিনন্দন এবং প্রশংসাযোগ্য বৈকি এই পদক্ষেপ। কাজের গতি বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মাসিক সেরাকর্মী পুরস্কার চালু হচ্ছে। সুচিন্তিত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে কর্মক্ষেত্রে। পুরস্কারের পরিমাণ যা-ই হোক, এটাও এক ধরনের কর্মস্বীকৃতি। পুরস্কার হিসেবে নগদ এক হাজার টাকা, পদক এবং সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত অবশ্যই গুরুত্ববহ। শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয় ব্যাপারটি। অধিকসংখ্যক পদক পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবেন পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার। প্রাথমিক এবং পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এই পদক পাবেন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পর্যায়ক্রমে তা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদেরও দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তব ও যুক্তিসঙ্গত বলে প্রতীয়মান হয়। যদি উদ্যোগটি হয় ফলদায়ক এবং হয় ব্যাপক সাড়া জাগানো, তবে ভবিষ্যতে মাঠ প্রশাসনেও তা চালু করার সিদ্ধান্ত হবে যুগোপযোগী। কে না চায় তার কাজের স্বীকৃতি। এই চাওয়া থেকে কর্মস্পৃহা বাড়ানো গেলে প্রশাসনে কাজের গতি বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। বাড়বে কর্মীর মনোযোগ, একাগ্রতা, কর্মনিষ্ঠা। একইসঙ্গে কর্মকুশলতাও বাড়বে। যা অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়, বরং সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করবে কর্মীদের মধ্যে। সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে পুরস্কারের বিধান রাখা হয়েছে। এই জন্য গৃহীত নীতিমালায় উল্লিখিত মানদ- অনুযায়ী সেরাকর্মীর মানদ- নিরূপণ করা হতে পারে। বিষয়টি যদিও এখনও খসড়া পর্যায়ে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ চলছে। শুদ্ধাচার কৌশলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি, আগ্রহ বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ এবং সঠিক ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে পুরস্কারের মানদ- সূচকে বলা আছে, একজন কর্মী পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার জন্য পাবেন পাঁচ নম্বর। এছাড়া সততার নিদর্শনের জন্য, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ, প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, সমন্বয় ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক নিরাপত্তার সচেতনতা, ছুটি গ্রহণের প্রবণতা, উদ্ভাবন চর্চার জন্য, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপরতা, সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে আগ্রহ, উপস্থাপন দক্ষতা, ই-ফাইল ব্যবহারে আগ্রহ, অভিযোগ প্রতিকারে সহযোগিতার জন্য পাঁচ নম্বর করে পাবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠান, বিভাগ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, দফতর, সংস্থায় ধার্য করা অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য দশ নম্বর দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এক শ’ নম্বরের মধ্যে যে বা যারা কিংবা যে প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ৮০ নম্বর পাবেন, তারাই তালিকাভুক্ত হবেন পুরস্কারের জন্য। ৮০-এর কম নম্বর পেলে তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত হবেন না। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই কেবল পুরস্কৃত হবে। আর এই সূচক থেকেই সেরাকর্মী বাছাইয়ের মানদ- নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক যে, উল্লিখিত সব সূচক এই ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া সম্ভব না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেয়া সঙ্গত। এর নেতিবাচক দিকও যে নেই তা নয়। এই নম্বর প্রদানে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি গুরুত্ব প্রদান, স্বজন তোষণ, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রটি সম্প্রসারিত হলে সব উদ্যোগই যাবে মাঠে মারা। সরকারের অনেক পদক প্রদানের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অযোগ্যরাও পদক পাচ্ছেন বা পুরস্কৃত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও এমন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। মুদ্রার একপিঠে যেমন ইতির অবস্থান, অপরপিঠে যদি থাকে নেতির আমেজ তবে সবকিছু ‘গুবলেট’ হতে বাধ্য। জনগণের সেবক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কাজের গতি বাড়াক- এটা যেমন কাম্য, তেমনি তাদের কর্মের স্বীকৃতি প্রদানও যথাযথ। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হবে- এমন আশা করা বাতুলতা নয়।
×