ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় কলকাতার কবি তন্ময় মণ্ডল

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বইমেলায় কলকাতার কবি তন্ময় মণ্ডল

কবিতা এক এক পাঠকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন অভিঘাত নিয়ে ধরা দেয়। তবে কবিতার চলন যখন স্বতঃস্ফূর্ত হয়, প্রকাশশৈলী যখন সাবলীল হয় তখন তা সাধারণ পাঠকের আরও বেশি কাছের হয়ে ওঠে। তন্ময় ম-লের কবিতা সহজ চলনে জীবনের গভীর দর্শনকে প্রত্যক্ষ করায়। তরুণ কবি তন্ময় ম-ল। তিনি ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। লেখালিখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলা কাটে মাসীর বাড়ি অশোকনগরে। স্কুল জীবন থেকে ক্রিকেটার হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে যখন এখানে সেখানে ছুটছেন, তখন অজান্তেই অসংখ্য বই পাঠ করতে করতে তার ভেতর বাসা বাঁধছিল সাহিত্যের প্রতি গভীর প্রেম। একটি দুর্ঘটনায় যখন ক্রিকেট থেকে ছুটি নিতে হলো, তখন লেখালেখি হয়ে উঠল শূন্যতার অবলম্বন। তার প্রথম লেখা প্রকাশিত ২০১০ সালে ‘সড়গড়’ পত্রিকায়। স্কুল জীবন শেষে অশোকনগর থেকে কলকাতার মনীন্দ্র চন্দ্র কলেজে পড়তে যাওয়া। এখন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। পদার্থবিদ্যার ছাত্র হলেও, সাহিত্যের প্রতি নাড়ির টান। জীবনে একাধিকবার পেশা বদলেছেন। বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা। ২০১৩ সাল থেকে ‘নবাঙ্কুর’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। তার প্রথম বই ‘মৃত্যুকে খোলা চিঠি’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের কলকাতা পুস্তক মেলায়। তারপর দীর্ঘ তিন বছরের বিরতি। এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘পালক জীবন’। বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলাবাংলা প্রকাশনী। এ বছরই কলকাতা পুস্তক মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার দীর্ঘ কবিতার বই ‘শীতঘুমে ১২ দিন’। বইটি প্রকাশ করেছে ৯নং সাহিত্য পাড়া লেন। তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা’ (দুই বাংলার গল্প নিয়ে গল্প সংকলন) এবং ‘অ আ ক খ ভাষার কবিতা সংকলন’ (মাতৃভাষা বিষয়ক কবিতা সঙ্কলন)। কোন কোন কবিতা জীবনের মর্মমূলে প্রবেশ করতে চায়, পাঠ করতে চায় প্রকৃতি, জীবনবোধ, হারিয়ে ফেলা স্মৃতির বেদনা, জন্ম-মৃত্যুর আখ্যান, মনুষ্যত্বের স্বরূপ, রহস্যনিবিড়তা ইত্যাকার বিষয় ভাবনার অবয়বে উন্মোচন করে তরুণ কবি তন্ময় ম-লের শিল্পবোধ। তার কবিতায় পরতে পরতে আছে দর্শনজাত ভাষা, আঙ্গিকশৈলীতে নতুনত্বের ছোঁয়া। মনে হচ্ছে, তিনি একটা স্বভাষার সূচনা করতে সক্ষম হয়েছেন, যা তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। তিনি স্বভাবে আত্মমগ্ন, প্রকাশেও তাই, ধ্যানী-তপস্বীর মতো। বিষাদ-বেদনায় দোকানপাট খুলে যে আখ্যান তিনি বর্ণনা করেন, তাতে ধরা পড়ে জীবনবোধের সরলতা ও সামাজিক ও নাগরিক জীবনের পটভূমি। তার কবিতায় চিত্রকল্প একটি নিত্য অনুষঙ্গ বিষয় প্রকৃতি ঘেরা। এর মধ্য দিয়ে তিনি মনুষ্যত্বের মহিমা দান করেছেন নতুন রূপে। তার কবিতার জীবনশিল্প প্রাণময়, অনেকাংশে অতীতচারী। তিনি বারবার পেছনে ফিরে চোখ বুজে চিন্তা দিয়ে দেখেন বুহুদূরের পথ। যে পথ মানবিক সভ্যতাকে নিয়ে যাবে বহুদূরে। তার কবিতার জগত যে চিরকালীন কবিতাবোধ-কবিতানুভাবকতা কিংবা দর্শন ও শিল্পের পাঁচফোড়ন, তার সরল প্রমাণ মেলে ‘মৃত্যুকে খোলা চিঠি’ কিংবা ‘পালক জীবন’ কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। তন্ময় ম-ল মনে করেন একজন লেখক মানে শব্দ-ভাস্কর্যশিল্পী। তিনি শব্দ দিয়ে কবিতার ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। সাহিত্য পর্বে আনেন নতুনত্ব। অবশ্য সব শিল্পীর ক্ষেত্রে নিত্যনতুন ভাস্কর্য নির্মাণ করা সম্ভবপর নয়। আমি সেই নতুন ভাস্কর্যশিল্পী কিনা জানি না। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×