ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুদে বিস্ময় কায়রান কাজী

প্রকাশিত: ১২:১৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

খুদে বিস্ময় কায়রান কাজী

পপি দেবী থাপা নিজের চেয়ে বেমানান আকারের বড় চেয়ারে বসে আছে এক খুদে। মুখে শিশুসুলভ সারল্যমাখা হাসি নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে জবাব দিয়ে যাচ্ছিল খুদে সাংবাদিকের সব কঠিন প্রশ্নের। ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলছিল সে হতে চায় ডাক্তার, পুষ্টিবিজ্ঞানী কিংবা হতে পারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কাইরান কাজীর পক্ষে যেন কোনটাই অসম্ভব নয়। অসাধারণ মেধাবী এই বালক এখন সারা আমেরিকার আগ্রহের কেন্দ্রে। মাত্র নয় বছর বয়সে স্কুলের ফোর্থ গ্রেড থেকে সরাসরি ভর্তি হয়েছে লাস পসিটাস কলেজে। যেখানে তার অতীত বিষয় রসায়ন এবং গণিত। বিস্ময়ের শুরুটা আরও অনেক আগেই। মাত্র ৩ বছর বয়সেই শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের ভুল শোধরায়। সে বয়সেই সহপাঠীদের ঘাবরে দিতেন সিরিয়ায় বাসার আল-আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত জটিল সব বিষয় নিয়ে লেকচার দিয়ে। তার এই দুষ্টমীর মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। তৃতীয় গ্রেডে বিজ্ঞান শিক্ষকের মধ্যাকর্ষণ সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে রীতিমতো বিপদেই পড়েন। নাম উঠে যায় দুষ্ট ছেলের তালিকায়। সে ঘটনার জেরে তাকে মুখোমুখি হতে হয় আইকিউ টেস্টের। ফলাফল চমকে দেয় ডাক্তার, শিক্ষক এমনকি তার অভিভাবকদেরও। তার গড় আইকিউ ৯৯.৯%। আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তাও যে কারও চেয়ে বেশি। পরীক্ষা দিয়ে কিন্তু কায়রান খুশি। তার মতে, এই ফলাফল সবাইকে বাধ্য করেছে আমাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে। তার নাম উঠেছে ডেভিডসন ইনস্টিটিউট ইয়ং স্কলারের তালিকায়। এই ধরনের মেধা লালন পালনের জন্য তার বাবা-মাকে নিতে হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। তবে এত কিছু কিন্তু বদলে দেয়নি কায়রানের জীবন। এখনও সে সমান বিনয়ী। নিজেকে জিনিয়াসভাবে কিনা এর উত্তরে সে খুব সহজ করেই বলে, ‘বাড়িতে আমাকে শিখিয়েছে জিনিয়াস হলো এমন কেউ যার মেধা মানবতার কাজে লাগে। আমি জানি, আমি ৯ বছরের এমন এক বালক যার বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা আছে।’ সঙ্গে রসিকতা করে এটাও যোগ করে যে, ‘মায়ের দাবি হচ্ছে, আমাদের বাড়িতে তিনিই একমাত্র জিনিয়াস। কারণ তিনিই আমাদের পরিবারকে ধরে রেখেছেন।’ কলেজে ভর্তির ব্যাপারটা কায়রানের জন্য খুব সহজ ছিল না। অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। এখন শিক্ষকরা তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট। বয়স যত কমই হোক আর দশজন ছাত্রের মতোই দেখেন তাকে শিক্ষকরা। কায়রান নিজেও মেনে চলে সব নিয়ম। সে খুব ভালই বোঝে যে, তার একার জন্য নিয়মের পরিবর্তন সম্ভব নয়, সেটা ঠিকও হবে না। আর দশজনের মতো বেশি সুবিধাপ্রাপ্তির প্রত্যাশাও নেই তার। আর সহপাঠীদের তুলনায় বয়সে ছোট হলেও কায়রান এর মধ্যেই প্রমাণ করেছে যে, সে রীতিমতো তাদের পড়াতে সক্ষম। তারপরও বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে তাকে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। কলেজে প্রথম দিকে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অনেক কৌতূহলী চোখের। সহপাঠীরা গোপনে তার ভিডিও করেছে, ছবি তুলেছে। এমনকি সহপাঠীদের ফিসফিস করে এও বলতে শুনেছে, ‘বাহ! পিচ্চিটা তো দারুণ কিউট আর স্মার্ট।’ কায়রান নিজ থেকে এগিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। এমনকি প্রথম দিন কলেজে যাওয়ার আগে শিক্ষদের ই-মেইলে এমন বার্তাও দিয়েছে যে, শ্রেণীকক্ষে তাকে দেখে তারা যেন বিভ্রান্ত না হন। আর আজ সহপাঠীরা তার কাছে এগিয়ে এসে নানা বিষয়ে পরামর্শ চান। ১০ বছরে পা দেয়ার আগেই কলেজ জীবনে প্রবেশ কায়রানের জন্য খুব বড় ব্যাপার নয়। পাঠ্য বিষয়গুলো খুব সহজেই আয়ত্ত করতে পারে সে। তার সমস্যা নিজের হাতের লেখা নিয়ে। নোট গ্রহণের দ্রুতগতির জন্য নিজের লেখা মাঝে মাঝে নিজেই বুঝতে পারে না। তা পাঠ্যোদ্ধার করে তার বাবা-মা তাকে টাইপ করে দিয়ে পড়তে সহায়তা করেন। এমন নয় যে তিনি সারাক্ষণ পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কেমেস্ট্রি ফাইনাল পরীক্ষার আগে মাত্র ১ ঘণ্টায় ১৪টি অধ্যায় শেষ করে নম্বর পেয়েছিলেন শতভাগ। পড়ালেখার পাশাপাশি ইয়ংওঙ্কস্ কোডিং একাডেমির এ্যাডভান্সড প্যাইতন স্টুডেন্টও সে। শিখছে বাংলা এবং ম্যান্ডারিন ভাষা। আশা করছে আগামী ২ বছরের মধ্যে পা রাখবে বিশ্বখ্যাত এমআইটিতে। আগামী গ্রীষ্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ইন্টারনিশিপ করতে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ টেকনোলজি কোম্পানিতে। এতকিছুর পরও কায়রান কিন্তু সেই সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা বলে, যারা ন্যূনতম সুযোগের অভাবে এগিয়ে যেতে পাড়ছে না। হয়ত একদিন সে তাদের জন্য কিছু করবে।
×