ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান

ঘুষখোরদের লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 ঘুষখোরদের লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যেসব সরকারী কর্মকর্তা ঘুষ খান কিংবা দুর্নীতি করেন তারা যেমন অসৎ তেমনি যারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা করতে পারেন না তারাও অসৎ বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণে যেসব কর্মকর্তা বা যারা ব্যর্থ হবেন তাদের কমিশন আইন অনুযায়ী অন্য সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে বলে জানান। ইকবাল মাহমুদ বলেন, পদ্ধতিগত কারণেই এ দেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। যাদের মান-সম্মানের ভয় নেই তথা কোন আত্মমর্যাদা নেই তাদের পক্ষে ঘুষ খাওয়া সত্যিই সহজ। এই লজ্জাহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হলে ঘুষখোরদের আইনের আওতায় এনে লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানী টিম গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ শ্রম ও সময় ব্যয় করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ঘুষ-দুর্নীতির ফাঁক-ফোকড় বন্ধ করা। কমিশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতিমুক্ত না থাকলে এবং চলন-বলন তথা আচরণের উৎকর্ষতা না থাকলে কেউ শ্রদ্ধা করে না। এটাও সকলকে মাথায় রাখতে হবে। ব্যক্তি কখনও অন্য ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে না। নিজের পরিবর্তন নিজেকেই করতে হয়। সবাই পদোন্নতি পেতে চান কিন্তু দায়িত্ব নিতে চান না। কমিশনের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩০ জন কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিপূর্ণভাবে ডকুমেন্ট তথা কাগজ নির্ভর। আবার দুদক আইন অনুসারে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যে কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যে কোন ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ করার জন্য আইনী নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। তদুপরি কেউ এই নির্দেশ পরিপালন না করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনী প্রক্রিয়ায় কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় প্রকার দন্ড দেয়ার বিধানও রয়েছে। তারপরও কেন কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্ত আইন অনুসারে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না? কেন কিছু কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারছেন না? এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে। কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দিয়েছে। এখন সমন্বিতভাবে কাজ করার সময়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত কাজের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, সময়াবদ্ধ কালের মধ্যে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন না করার ব্যর্থতার জন্য কেউ কেউ হাজার হাজার অজুহাত দেখান। আবার এই প্রতিষ্ঠানেরই অনেক মেধাবী সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নির্ধারিত সময়েই মানসম্পন্ন তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। তাহলে যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা কী হতে পারে। নিজেরাই নিজেদের মূল্যায়ন করুন। দুদকে অনেক ভাল ভাল কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সুনিপুণভাবে নির্মোহ থেকে মামলার তদন্ত করেন। তাদেরকে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদেরকে নিয়ে মানুষ কী ভাবছে, তা ভেবে দেখতে হবে। প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রধান বলেন, আমরা হাজার হাজার কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের এই শিক্ষাগুলো যাতে নিজ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে যারা ব্যর্থ হবেন তাদের কমিশন আইন অনুযায়ী অন্য সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে যে পরীক্ষা হবে তার ফলাফল ডোসিয়ারে সংরক্ষণ করা হবে। পদোন্নতির বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণের ফলাফল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ।
×