দাম্পত্য জীবনে রাগ-অভিমান বা ঝগড়া হবে না, এটা সম্ভব না। দুনিয়াতে এমন কোন দম্পতি নেই যারা ঝগড়া বিবাদ করেনি কখনও। অনেকে তো বলেই বসেন যে ঝগড়া ছাড়া কোন দাম্পত্যকে সম্পূর্ণই বলা যাবে না। ঝগড়া কেন হয় আসলে? যদি কোন অভিযোগ, অভিমান থাকে তবেই হয়। যেখানে কোন অভিমান বা অভিযোগ নেই, সেই দাম্পত্য যেন প্রাণহীন, তাতে কোন গতিই নেই। বরং রাগ-অভিমান-ঝগড়ায় মোড়া দাম্পত্যই অনেক অনেক বেশি কাম্য। এতে করে যেন ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। টান আর আকর্ষণ আরও মজবুত হয়। লিখেছেন- টুটুল মাহফুজ
কীভাবে বুঝব?
অনেক সময়ে দেখা যায়, জেদ বা রাগের বশে প্রায় জোর করেই একজন আরেকজনকে কষ্ট দেয়। আবার কখনও বা নিজেকেই কষ্ট দিয়ে বসে। এটা কিন্তু অতিরিক্ত ভালবাসা থেকেই হয়। এর ফলে যখন মান অভিমান ভাঙানোর পর্ব আসে, তখন বোঝা যায় ভালবাসা কীভাবে জমে ছিল মনের মধ্যে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, রাগ আর ক্ষোভের বশে একে অন্যকে অপমান অপদস্ত করে বসে। এতে তুমুল পর্যায়ে ঝগড়াও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অভিমান কেটে গেলেই শুরু হয় অনুশোচনা। তখন দেখা যায় সঙ্গীকে অপমান করে নিজেরই অপরাধবোধ শুরু হয়ে যায়। একটা ছোট্ট সরি বলেই ফিরে যাওয়া যায় আগের ভালবাসায়।
হয়ত কোন কটু কথা বা খারাপ ব্যবহার করেও অনেক সময়ে চটিয়ে দেয়া হয় সঙ্গীকে। কখনও ইচ্ছা করে, কখনও ইচ্ছা না করে। কখনও বা কোন কারণ ছাড়াই। মনে করা হয় এটাও অনেকটা ভালবাসার বহির্প্রকাশ।
অনেক সময় দেখা যায় যদি সঙ্গী প্রত্যাশা মতো কাজ করেনি, বা কথা দিয়ে কোন কথা রাখেনি বা কোন কথা ভুলে গেছে। এতে করে প্রথমে আস্তে আস্তে ঝামেলা শুরু হয়, পরে ঝামেলা বড় আকারে পৌঁছে। এর কারণ কি? ভালবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাশা বরাবরই বেশি থাকে। আর তাই অতি সামান্য বিষয়েও মন কষাকষি হয়ে বসে।
কেউ সঙ্গীর ওপর রাগ করে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে, অভিমান করে খাওয়া ঘুমানো বন্ধ করে দিল। এতে করে তার সঙ্গীই তাকে সবচেয়ে বেশি মিস করবে, খোঁজাখুঁজি করবে, মন খারাপ করে কান্নাকাটি করবে।
আসলে মাঝে-মধ্যে পরস্পরকে একটু-আধটু কষ্ট দিলে মজবুত হয় সম্পর্ক। অনেকটা এ্যাসিড টেস্টের মতো। কারণ যে কষ্ট দিচ্ছে এবং যে কষ্ট পাচ্ছে- কষ্ট দুজনেরই সমান হচ্ছে। সেই সঙ্গে বুঝে নিতে পারছে যে দুজন দুজনের কত প্রয়োজনীয়, কতটা ভালবাসা লুকিয়ে আছে প্রত্যেকের মাঝে। এটাই দাম্পত্য, এটাই ভালবাসা।
ত্রুটি বড় করে না দেখা
একসঙ্গে থাকতে গেলে অনেক সময় ছোটখাটো অভ্যাসগুলো অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন হয়ত সব সময় মোজা খুলে বিছানায় রেখে দেন। অপরজন টুথপেস্টের ঢাকনা লাগাতে যান ভুলে। অনেক পরিবারে এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অযথা ঝগড়া শুরু হয়। তাই এসব বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে জীবন কিন্তু অনেক মধুর হতে পারে।
স্বীকৃতি
সব মানুষই মাঝে মাঝে তার কাজের স্বীকৃতি চায়, এমনকি সংসারের কাজের ক্ষেত্রেও। তাই মাঝে মধ্যে একে অপরকে সে কথা জানান। আরও রোমান্টিক হয়, যদি কথাটা জানানো যায় ছোট্ট একটি ‘নোট’ লিখে অথবা এসএমএসের মারফত। দেখবেন পরেরদিন কাজের আগ্রহ তো বাড়বেই, তার সঙ্গে আপন মানুষটিকে মনে হবে আরও কাছের।
প্রশংসা
অনেক দিন একসঙ্গে থাকার ফলে সবকিছুই কেমন যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন পোশাক বা হেয়ার স্টাইলে আপনার সঙ্গীকে সুন্দর লাগছে- এ কথা বলতে একদম সংকোচ করবেন না। আসলে এমন ছোটখাটো প্রশংসার ‘এফেক্ট’ কিন্তু অনেক বড় হয়। অর্থাৎ ‘প্রশংসা ছোট তবে তার এফেক্ট বড়’।
ভালবাসার স্পর্শ
ভালবাসা গাছের মতো, যত যত্ন করা যাবে ততই বাড়বে। ভালবাসার স্পর্শে ডালপালা ফলে-ফুলে ভরে যায়, আর অযত্নে যায় শুকিয়ে। অনেক দম্পতি মনে করেন, ‘ভালই তো আছি, আবার ভালবাসা দেখাতে হবে কেন? অথচ ভালবাসা দেখালে দাম্পত্য জীবন হতে পারে মধুময়। ঠিক গাছের মতোই যত্ন নিন। হঠাৎ করেই ফুল বা ছোটখাটো উপহার দিয়ে আপনার প্রিয়া বা প্রিয়তমকে দিন চমকে!
শখ
মাঝে মাঝে কখনও নিজেরা একসঙ্গে এমন কিছু করুন, যাতে অন্য ধরনের গল্প বা আলোচনা হতে পারে। একসঙ্গে সাইকেল চালাতে বা হাঁটতে যেতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে প্রাণ খুলে হাসুন বা কথা বলুন। একে অপরের সঙ্গে সব কিছু ভাগাভাগি করার নামই যে বন্ধুত্ব, আর সেটাই তো দীর্ঘ ও সুখী দাম্পত্যের আসল কথা।
রাগ পুষে রাখতে নেই
রাগ, অভিমান ছাড়া কি দাম্পত্য জীবন মধুর হয়? রাগ, দুঃখ, অভিমান তো থাকবেই। কিন্তু তাই বলে রাগ যেন বেশিক্ষণ না থাকে। দিনের শেষে রাগ ভুলে অপরের কাছে এগিযে যান। রাগ বা মান ভাঙানোর উত্তম সময় সেটা। তা না হলে দুজনকেই হয়ত না ঘুমিয়ে সারাটা রাত কাটাতে হবে, যার প্রভাব পড়বে পরবর্তীতেও।
কিছুটা দূরত্ব
মাঝে মধ্যে দাম্পত্য জীবনের সব কিছুই একঘেয়েমি মনে হতে পারে। তাই স্বামী তার সহকর্মী বা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কখনও আড্ডায় যেতে পারেন। স্ত্রী তার ছেলেবেলার বন্ধু-বান্ধবী বা কাছের কোন মানুষের সঙ্গে শপিং বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এতে নিজেদের অনেকটা হালকা মনে হবে। মাঝে মাঝে একটু দূরত্ব কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে-অপরকে কাছে পাওয়ার আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: