ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাজমুল মৃধা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ দেয়ালে একুশের অমর গাথা

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ দেয়ালে একুশের অমর গাথা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? মা, মাতৃভূমি এবং স্বাধীনতাÑ তিনটি শব্দ সাতান্ন হাজার বর্গমাইল শস্য শ্যামলা এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রক্ত দিয়ে। যে ভাষাকে গলা টিপে হত্যা করতে চাওয়ায় ছাত্র-শিক্ষক, তরুণ-তরুণী, শ্রমিক-মজুর আর কিশোরের মনে চাপা অগ্নিকা- চোখের প্রজ্বলিত দৃষ্টিতে প্রকাশ পেয়েছিল ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে। যে ভাষায় রত্নগর্ভা জননী ‘মা’ ডাক শুনে খুঁজে পায় স্বর্গীয় প্রশান্তি, শীতের সকালে মাদুর পেতে যে ভাষায় পল্লী জননী সন্তানকে শেখায় অ, আ, ক, খ ধ্বনি- সে ভাষার নাম বাংলা ভাষা। এ ভাষা নিয়ে টানাটানি করে পারেনি পাকিস্তানীরা। সন্তানের কাছ থেকে মাকে ছিনিয়ে নেয়ার শক্তি এ পৃথিবীতে নেই- বুলেটের সামনে বাঙালী বীরদের রক্তদান তার প্রমাণ। জয় হয়েছে বাংলা ভাষার- যে ভাষার স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনির প্রতিটি বর্ণ সালাম, রফিক, জব্বারদের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে লেখা। মেঠোপথ, সবুজ ধানক্ষেত অথবা প্রবাহিত নদীধারের পাশে বসে সাধক বাউলের দোতারায় সুরতোলা মধুর ধ্বনির নাম একুশ। ঘনকালো মেঘেঢাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত বঙ্গভূমিতে পরদেশী বুলি চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করা মরুদেশের দোসরদের হাত থেকে আজ এ দেশ মুক্ত। আজ বাংলার আকাশ পরিষ্কার- স্বচ্ছ স্বাধীন আকাশে ঘুরে বেড়ায় দোয়েল, শ্যামা, শালিক, বক আর টুনটুনিরা। বসন্তে কোকিলের মায়াবী ডাকে দিগন্তজোড়া বার্তা দেয় একুশ আমার অহঙ্কার, একুশ আমার চেতনা। এই বার্তার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে দেয়ালে চিত্রায়িত হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এটি অঙ্কন করেছে। সকালের রোদে খোলা জানালার পাশে মাদুর পেতে বই নিয়ে বসা মা-সন্তান, দোতারা হাতে সাধক বাউল, মুক্ত বাতাসে পাখিদের আনাগোনা, প্ল্যাকার্ড হাতে বাংলা ভাষার জন্য মিছিল এবং পাকিস্তানী হানাদারদের গুলিতে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়া নিথর দেহ, দেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অকৃত্রিম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন- একটি অমর একুশ, একজন মমতাময়ী মা, একটি স্বাধীন দেশ এবং একটি গর্বিত মাতৃভাষা। ছবি : অন্তর রায়
×