ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাসিক সেরাকর্মী পুরস্কার চালু করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাসিক সেরাকর্মী পুরস্কার চালু করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

তপন বিশ্বাস ॥ কাজের গতি বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মাসিক সেরাকর্মী পুরস্কার চালু হচ্ছে। পুরস্কার হিসেবে নগদ ১ হাজার টাকা, পদক এবং সনদ দেয়া হবে নির্বাচিতদের। অধিক সংখ্যক পদক পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রাথমিক এবং পরীক্ষামূলক চালু করা এই পদক পাবেন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পর্যায়ক্রমে তা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদেরও দেয়া হবে। ভাল ফল বা ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলে মাঠ প্রশাসনেও তা চালু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগেও তা চালু করা হবে। এই কার্যক্রম কর্মরত কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াবে। শুরু হবে সুস্থ প্রতিযোগিতা। তাছাড়া পরিশ্রম করার পর যদি কোন কর্মী তার কাজের স্বীকৃতি পান তা হলে তার মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পুরস্কারের নীতিমালায় যেসব মানদ- দেয়া আছে সেগুলো থেকে কিছু কিছু নিয়ে আমরা সেরাকর্মীর মানদ- তৈরির চিন্তা করছি। তিনি আরও বলেন বিষয়টি চূড়ান্ত করার পর জানতে পারবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের শুরুতে মন্ত্রিসভায় অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের স্থান করে দিয়েছেন। মন্ত্রিরাও চাচ্ছেন ভাল কিছু করতে যা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে তাদের চিন্তার ছাপ মন্ত্রণালয়গুলোতে পড়তে শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি, আগ্রহ বৃদ্ধি এবং সঠিক কাজ সঠিক ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই কাজের জন্য তারা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পুরস্কারের জন্য যে মানদ-গুলো ঠিক করেছেন তা আমলে নেয়া হচ্ছে। ওই মানদ-ে সূচকে বলা হয়েছে, একজন কর্মীর পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা জন্য ৫ নম্বর দেয়া হবে। এছাড়া সততার নিদর্শনের জন্য, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য, শৃঙ্খলারোধের জন্য, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের জন্য, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণের জন্য, প্রতিষ্ঠানের বিধি বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার জন্য, সমন্বয় ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতার জন্য, তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতার জন্য, পেশাগত স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক নিরাপত্তার সচেতনতার জন্য, ছুটি গ্রহণের প্রবণতার জন্য, উদ্ভাবন চর্চার জন্য, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপরতার জন্য, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে, স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে আগ্রহের জন্য, উপস্থাপন দক্ষতার জন্য, ই-ফাইল ব্যবহারে আগ্রহের জন্য, অভিযোগ প্রতিকারে সহযোগিতার জন্য ৫ নম্বর করে এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, দফতর, সংস্থা কর্তৃক ধার্যকৃত অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ১০ নম্বর দেয়া হবে। সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে যে বা যারা কিংবা যে প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ৮০ নম্বর পাবেন তারা পুরস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত হবেন। ৮০ কম নম্বর পেলে তিনি শুদ্ধাচারের পুরস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত হবেন না। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হবে। এই সূচক থেকেই সেরাকর্মী বাছাইয়ের মানদ- নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব। তবে উল্লিখিত সব সূচক এই ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে না। কিছু কিছু নেয়া হবে। মাসিক সেরাকর্মী নির্বাচন এবং পুরস্কার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টিকে ভাল উদ্যোগ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন, অফিসে ঠিক সময় আসব। সময়মতো কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাব। নিয়মের মধ্যে সব চলবে এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা গেছে অনেক সময় অফিস ছুটির পরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের ছুটি দেয়া হয় না। অফিসাররা অফিস করেন তাই আমাদেরও থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাতের ৮/৯টার সময় অফিস থেকে স্যার বেরুলে আমরাও বের হই। কিন্তু তখন তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের জন্য এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। বাসে বাসায় ফিরতে হয়। পরদিন আবার সকাল ৯টার মধ্যে ঠিক সময় অফিসে আসতে হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের যাতায়াতের জন্য কোন বরাদ্দ থাকে না। থাকে না বিকেলের নাস্তার জন্য কোন অর্থকড়িও। অথচ ৫টায় অফিস ছুটির সময় বেরুতে পারলে কর্মচারী কল্যাণ থেকে আমাদের জন্য যে বাস দেয়া হয়েছে সেই বাসে করে নামমাত্র ভাড়ায় বাসায় ফিরতে পারতাম। কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো সংবেদনশীলভাবে বিবেচনার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
×