ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে অভিভূত সোহাগের মা-বাবা

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে অভিভূত সোহাগের মা-বাবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চকবাজার অগ্নিকা-ে দগ্ধ সোহাগ (২২) বার্ন ইউনিটের আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন। দিনমজুর বাবা আবু তাহের (৫৫) ছেলের অবস্থা দেখে কাতর হয়ে পড়েছেন। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। দরিদ্র মা-বাবাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে শুরু করেছিল সোহাগ। এর মধ্যেই সে শিকার হয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের। তবে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে এবং চিকিৎসার আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেয়ে মনে সাহস পেয়েছেন সোহাগের পিতা আবু তাহের ও মাতা বেদানা বেগম। সোহাগের মাতা পিতার মতো সকল দগ্ধ রোগীর স্বজনেরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস এবং সহজেই সকলকে আপন করে দেয়ার ক্ষমতা দেখে অভিভূত হয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চকবাজারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। আর চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বজনদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে পরিস্থিতি মোকাবেলার অনেক ভরসা পেয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। আগুনে আহতদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে দগ্ধ প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন। যেকোন পরিস্থিতিতে দগ্ধদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। ডাঃ সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, গত বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ ওই অগ্নিকা-ে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে নয়জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে, তাদের অবস্থাও ভাল নয়। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর দগ্ধ রোগীদের কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সোহাগের মা বেদানা বেগম জনকণ্ঠকে জানান, সোহাগের দেহের ৬০ শতাংশ পুড়েছে। তার ছেলে চকবাজারের একটি পারফিউমের দোকানে চাকরি করত। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে তারা অনেক সান্ত¡না পেয়েছেন। গরিবের সংসারে ছেলেকে হারানোর আশঙ্কায় তারা ভয়ে আছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তারা মনে সাহস পেয়েছেন বলে জানান বেদানা বেগম। একইভাবে চকবাজারের অগ্নিকা-ে দগ্ধ আনোয়ার হোসেন (৫৫) এর মেয়ে বিথী(১৯) এর মুখ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার সুর বের হয়ে এলো। বিথী জনকণ্ঠকে জানায়, তার বাবা পেশায় রিক্সাচালক। তিন ভাইসহ তারা কামরাঙ্গীরচর থাকেন। রাতে বাবা নিজেই বাসায় ফোন করে বলে, আমার শরীরে আগুন লাগছে। এরপর তার ফোনের পাশে থাকা অপরিচিত কণ্ঠ থেকে বলা হয় ঢাকা মেডিক্যালে চলে আসেন। হাসপাতালে এসে দেখি বাবার এমন অবস্থা। বিথী আরও জানায়, তার বাবা আনোয়ার হোসেন প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে বাসা কামরাঙ্গীচর ফিরে যান। বুধবার রাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চকবাজার মোড়ে এসে যানজটে আটকে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের ফুলকি এসে গায়ে পড়ে। কোথা থেকে আগুন এলো, তা আর জানার উপায় ছিল না। গায়ে লাগা আগুন নেভাতে মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকেন। ততক্ষণে পুড়ে গেছে শরীরের বেশিরভাগ অংশ। রিক্সাটিও পুড়ে ছাই। অন্যের সাহায্যে কোনমতে প্রাণ নিয়ে তার বাবা ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তার সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে খুব ভাল লাগছে বলে জানায় বিথী। সেদিনের আগুনে আয়নার দোকানের কর্মচারী সেলিম মিয়ার (৪০) শরীরের ১৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি বেগম বলেন, আমাদের চার বছরের একটা মেয়ে আছে। পরের মাসেই পরের সন্তান হবে। এর মধ্যে এমন দুর্ঘটনা। খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। অসহায় লাগছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে এবং তার সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে অনেক ভরসা পেয়েছে বলে জানান আঁখি বেগম। এভাবে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগী এবং তাদের স্বজনরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে আপনভাবে পেয়ে অনেক ভরসা পেয়েছেন। জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে সোহাগের (২৫) শরীরের ৬০ শতাংশ, রেজাউলের (২১) শরীরের ৫১ শতাংশ, জাকিরের (৩৫) শরীরের ৩৫ শতাংশ, মোজাফফরের (৩২) শরীরের ৩০ শতাংশ এবং আনোয়ারের (৫৫) শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়েছে। আর ওয়ার্ডে থাকা হেলালের (১৮) শরীরের ১৬ শতাংশ, সেলিমের (৪৪) শরীরের ১৪ শতাংশ, মাহমুদুলের (৫২) শরীরের ১৩ শতাংশ এবং সালাহউদ্দিনের (৪৫) শরীরের ১০ শতাংশ পুড়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
×