স্টাফ রিপোর্টার ॥ চকের চুড়িহাট্টায় স্বজনহারাদের কান্না থামছেই না। ঢাকা মেডিক্যালে মর্গের লাশের ঠাঁই হয়েছে কবরে। এতে স্বজনদের আর্তনাদ স্থায়ী হয়ে গেছে। এখনও চুড়িহাট্টা থেকে হাসপাতালের হিমঘরে স্বজনের চোখ খুঁজছে নিখোঁজদের।
বুধরাত রাতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিকের গুদাম সরানোর নির্দেশ এসেছে। তবে এর আগেও নিমতলী ট্র্যাজেডির পর একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিমতলীর ঘটনার পর রাসায়নিকের গুদাম সরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এবারও সেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে কিছুদিন পর তা থেমে গেলে চুড়িহাট্টার পর আবারও কান্নার প্রস্তুতি থাকতে হবে মানুষের।
তারামন বিবির কিভাবে চলবে ॥ দুই ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তারামন বিবির শুকিয়ে গেছে অশ্রু। উধাও হয়ে গেছে গলার স্বরও। চুড়িহাট্টায় আগুন এই মায়ের বুক খালি করেছে। দুই ছেলে মোহাম্মদ আলী ও অপু রায়হান এবং তিন বছরের নাতি পুড়ে মরেছে আগুনে। চুড়িহাট্টায় এসেছিলেন তারামন পাশের চেয়ারে বসেছিলেন সব হারানো সদ্য বিধবা দুই নারী। আলী আর অপুর স্ত্রী। পাশেই চিৎকার করে কাঁদছেন তাদের বড় দুই বোন।
তারামনের চিন্তা কি করে চলবে আগামী দিন। সংসারে আয় বলতে যা কিছু এই দুই ছেলেই করত। চকের আগুন নিশ্চিন্ত এক মাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। দুই ছেলের বউ-সন্তানদের চরম অনিশ্চয়তায় ভাসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে। সব কিছুই হারিয়ে ফেলেছে ওরা। তারামনের একটাই আকুতি ‘দয়া কইরা সরকাররে কইয়া একটু আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করে দেন’।
নিশ্চিন্ত মনে চকের মানুষরা ফুটন্ত লাভায় বসবাস করলেও অগ্নিবীমা নেই কারও। আগুনে পুড়ে মরণেও দেখার কেউ নেই। ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও জায়গা নেই। পুরান ঢাকার যা পরিস্থিতি তাতে ভবনের অনুমোদন নেই। অনুমোদিত ভবনে চাইলেই কোন ব্যবসা করা যায় না। সেখানে বীমা করা তো দূরের বিষয়। কয়েক লাখ লোকের বসবাস এই পুরান ঢাকায়। কিন্তু ঝুঁকি থেকে কোনভাবেই বের হতে পারছে না। ঝুঁকি মোকাবেলার মতো বিষয়গুলো থাকলে মানুষ কিছুটা ক্ষতিপূরণ পেলে তাতে অন্তত আবার দাঁড়ানোর সুযোগ পেত।
এনামুলের বাবার চোখ এখনও খুঁজছে সন্তানকে ॥ চকবাজারের আগুনে স্বজনরা নিহতদের খুঁজে পেলেও এখনও কেউ এমন আছেন খুঁজে ফিরছেন। ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার হলেও এনামুলের বাবা এখনও হাতে দুই ছবি নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন এনামুলের খোঁজে। এনামুলের বৃদ্ধ বাবা জানান, বুধবার রাতে তার ছেলে চকবাজারের সাকুরা মার্কেটে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে রিক্সায় কেরানীগঞ্জের বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন। গত তিনদিন ধরে প্রতিদিনই চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের ঘটনাস্থলে ছুটে আসছেন, যদি ছেলের খোঁজ মেলে সে আশায়। কিন্তু খোঁজ মিলছে কোথায়। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির কথা তো প্রশাসনই বলছে। আর ডিএনএ টেস্ট করতে গিয়ে জানানো হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তা পরীক্ষা করার পর আসলে বলা যাবে সেখানে আরও কোন মানুষের দেহাবশেষ ছিল কি না।
হয়ত এটাই আহসান উল্লাহর মরদেহ ॥ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিমঘরে রাখা একটি লাশের শরীরে জড়িয়ে রাখা নেভি ব্লু রঙের শার্টের টুকরো দেখে স্বজনরা ধারণা করছেন মরদেহটি মোঃ আহসান উল্লাহর। কিন্তু অকাট্য প্রমাণ নেই তাদের কাছে। পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে চেনারও উপায় নেই। শনিবার হিমঘরে রাখা মরদেহটিকে কয়েকবার খুব ভাল করে দেখেছেন স্বজনরা। তারা অনেকটা নিশ্চিত যে মরদেহটি তাদের। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের দিন বিকেলে ব্যবসায়িক কাজে একটি দোকানে যান আহসান। পরে ওই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে আহসানের গায়ের শার্টের রঙের সঙ্গে মরদেহটির হাতের কব্জি থেকে নেয়া শার্টের টুকরোটিকে মেলান স্বজনরা। শার্টের টুকরোটি শার্টের রঙের সঙ্গে মিলে যাওয়া স্বজনদের দাবি এটি আহসানের মরদেহ। এছাড়া তারাও আরও দাবি করে বলছেন, শার্টের টুকরো পাওয়া মরদেহ সঙ্গে আহসানের শারীরিক গঠন হুবহু মিল রয়েছে। তবে যেহেতু মুখ দেখে চেনা যাচ্ছে না তাই এখনই এই লাশ হস্তান্তরের পক্ষে নয় ঢাকা মেডিক্যাল। ডিএনএ টেস্টের ফলাফল আসা পর্যন্ত অপেক্ষ করতেই হচ্ছে।