ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পুরনো ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডির পর আরও সতর্কভাবে নজরদারি চালানো হলে চকবাজারের অগ্নিকান্ডে বিপুল প্রাণহানি হয়ত এড়ানো যেত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাই তিনি বলছেন, কোন কিছু দেশে ঘটলে যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে, দায় তো সরকার এড়াতে পারে না। এটা তো সত্য কথা। কিন্তু জনসাধারণ যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার। কারণ তাদের এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। সেখানে সচেতনতাও একটা ব্যাপার ছিল, সতর্কতার ব্যাপার ছিল। পাশাপাশি যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা সাম্প্রতিক বেড়ে যাওয়ায় এর বিকল্প কী হতে পারে, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। শুক্রবার চকবাজারের অগ্নিকান্ডে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান কাদের। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। বুধবার রাতে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের পাঁচটি ভবনে আগুন ধরে যায়। সেসব ভবন এবং আশপাশের দোকানে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম ওই আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয় বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় মারা যান অন্তত ৭০জন। আহতদের মধ্যে নয়জন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কালবিলম্ব না করে পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেটা হয়ে গেছে এবং যারা চলে গেছে, ক্ষয়ক্ষতি যা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফেরত দেয়া যাবে না। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেটা আরও আগেই করা উচিত ছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, চেষ্টা ছিল। কিন্তু এটা এমন একটা ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকা, এখানের কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আবার ভেতরে ভেতরে এসে জায়গা নিয়ে ফেলেছে। এটা একটু মনিটরিং করলে হয়ত এড়ানো যেত। মন্ত্রী বলেন, ভুল সংশোধন করে নতুন করে পথ চলার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী যত দ্রুত সম্ভব রাসায়নিকের গুদাম সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছেন। আশা করি মেয়র কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নেবেন একথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, এখানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবার-পরিজনের অনেকে সামর্থ্যবান ব্যক্তি। টাকাপয়সা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে না। তারপরও এ ব্যাপারে সরকার মানবিক, আর্থিক সাহায্য, পুনর্বাসন- এ ব্যাপারে যা যা করণীয়, প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নিয়েছেন। কবে নাগাদ রাসায়নিকের গুদাম বন্ধ হতে পারে এবং কোন কোন রাসায়নিকের গুদাম বন্ধ হচ্ছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে কেমিক্যালের যে গোডাউনগুলো আছে, অবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে। এখানে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে কোন প্রকার গাফিলতি আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। দিন-ক্ষণ এভাবে বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে দিন-ক্ষণের কী আছে! সরকার এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় না, সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু গোডাউন সরিয়েও নিয়েছে। পরে গোপনে এসে অনেকে জেঁকে বসেছে। এটার ক্লোজ মনিটরিংটা হলে হয়তবা এমনটা হতো না, সেটা ঠিক আছে। চকবাজারের অগ্নিকান্ড নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বহীন আচরণের’ যে অভিযোগ এনেছেন, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব কি বলছেন সেটা না বলে আমি একটা কথা বলতে চাই, যে বিষয়টা হয়ে গেছে এই বিষয়টা নিয়ে, এই দুর্ঘটনা নিয়ে প্রত্যেকেরই দায়দায়িত্ব আছে, নাগরিক হিসেবে সবাইকে পজেটিভ কিছু করতে বলব। রাজনৈতিক দল হিসেবে, এত লোকের প্রাণহানি মানুষের দুঃখ আর দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে আমাদের কারও রাজনীতি করা উচিত নয়। এ বিষয়টি আর যাই করুন, রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন না। দর্শনার্থীদের হাসপাতালে ভিড় না করার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি একটা অনুরোধ করব, যারা বার্ন ইউনিটে ভর্তি অছেন, এখানে যদি দর্শনার্থী বাড়তে থাকে, তাহলে রোগীর জন্য খারাপ হবে। ডাক্তাররা বার বার বলছে আপনজনকে বাঁচাতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। দর্শনার্থী বাড়ানো যাবে না। অগ্নিদগ্ধদের পাশে রেলমন্ত্রী ও মেনন ॥ রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দগ্ধদের দেখতে শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে যান ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। সেখানে তিনি অগ্নিদগ্ধদের সঙ্গে কথা বলেন ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন, বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সামন্ত লাল সেন, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা আলমগীর রতন, জাকির হোসেন রাজু, যুবনেতা মাহবুব আলম চৌধুরী জনি, মামুন মোল্লা প্রমুখ। রেলপথমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকা-ের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এ রকম ভয়ানক দুর্ঘটনায় সারা দেশবাসীর মতো সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তিনিও অত্যন্ত মর্মাহত, শোকাহত। মন্ত্রী বলেন, এ সঙ্কটকালে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে। সরকারীভাবে নিহত ও আহতদের সাহায্য করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে সবকিছু তদারকি করছেন। মন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে। ভবিষ্যতে যাতে আর কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। রেলপথমন্ত্রী পরে ঢাকা মেডিক্যাল হাসাপাতালে আহতদের দেখতে যান। আহতদের বিষয়ে খোঁজ নেন এবং তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
×