ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জমি দখল করে মৎস্য প্রকল্প ॥ শতাধিক কৃষকের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জমি দখল করে মৎস্য  প্রকল্প ॥ শতাধিক  কৃষকের বিক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২২ ফেব্রুয়ারি ॥ শরীয়তপুরের ছয়গাঁও ইউনিয়নের স্বনির্ভর এলাকায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক কৃষকদের ফসলি জমি দখল করে মৎস্য প্রকল্প করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ২ মাস ধরে ৩ শতাধিক একর জমিতে কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারছে না। আর এতে করে ৩টি গ্রামের ৫ শতাধিক কৃষক পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ইরি-বোরো ধানের এসব ফসলি জমি রক্ষার জন্য উক্ত বিলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে কৃষক-কৃষাণীসহ স্থানীয় লোকজন। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের স্বনির্ভর এলাকায় মৎস্য প্রকল্প করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এই প্রকল্পের জন্য জমি চাইলে কৃষকরা দিতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আধারে কৃষকদের জমি জোরপূর্বক ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করছে তারা। এখানে ৩টি ইরি-বোরো ধানের ব্লক থাকলেও চলতি মৌসুমে তাতে ধান চাষ করতে পারছে না কৃষকরা। ধান চাষের মৌসুম শেষের দিকে। কিন্তু ওই প্রভাবশালী মহল ব্লকের ড্রেন কেটে কৃষকদের ক্ষেতে পানি সেচ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ব্লক ম্যানেজারকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে তারা। সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ৫ শতাধিক কৃষক। ফলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ২ মাস ধরে ৩ শতাধিক একর জমিতে কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারছে না। রাতের বেলায় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে এসে চাষাবাদ না করার জন্য কৃষকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। তারা মৎস্য প্রকল্পের জন্য জমি দেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে কৃষকদের। এতে ছয়গাঁও ইউনিয়নের পাপড়াইল, পম মীর্জাপুর ও আর্জিপম গ্রামের ৫ শতাধিক কৃষক পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ইরি-বোরো ধানের এসব ফসলি জমি রক্ষার জন্য উক্ত বিলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে কৃষক-কৃষাণীসহ স্থানীয় লোকজন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কৃষক গাজী মোহাম্মদ হোসেন, মজিবুল হক ঢালী, দুলাল মৃধা, রাজ্জাক সরদার, মালেক বেপারী, ব্লক ম্যানেজার হামিদ ছৈয়াল, কৃষাণী রাশিদা, বিলকিছ আক্তার, কানিজ ফাতেমসহ এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৩শ’ একর জমি নিয়ে পাপড়াইল, পম মীর্জাপুর ও আর্জিপম গ্রামবাসীর ফসলি জমি এবং এখানে ৩টি ব্লক চালু আছে। এ জমিতে চাষাবাদ করে আমাদের সংসার চলে। আমাদের খাবারসহ গৃহপালিত পশু-পাখির খাবারের ব্যবস্থা হয়। এখানে জোরপূর্বক জমি দখল করে মৎস্য প্রকল্প করছে প্রভাবশালী একটি মহল। কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখল করে মৎস্য প্রকল্প করার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মীর মামুন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম। কৃষকদের ধান চাষে বিঘœ হওয়ার কথা স্বীকার করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, ইতোপূর্বে এ বিষয়ে একজন অভিযুক্তকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় পুনরায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত মৎস্য প্রকল্প মালিক মইনুল মোড়ল। তবে তিনি কৃষকদের কোন জমি দখল করেননি বলে দাবি করেন।
×