ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

উঁকি দিচ্ছে নগর সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 উঁকি দিচ্ছে নগর সৌন্দর্য

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আগের টার্মে মেয়র থাকাকালীন বিশে^র সেরা ১০ সিটির তালিকায় ধূলিকণা মুক্ত নগর হিসেবে নাম উঠে এসেছিল রাজশাহীর। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে বিএনপির মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ক্ষমতায় আসার পর লিটনের গড়া তিলোত্তমা রাজশাহীর এই সৌন্দর্য ক্রমেই ধূসর হয়ে পড়েছিল। এবার দ্বিতীয় টার্মে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আবারও নগর নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তার উন্নয়নমুখী কর্মকা-ে দায়িত্ব গ্রহণের আড়াইমাসের মাথায় আবারও নগর সৌন্দর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। রাতেরবেলা রাজশাহী নগরকে রঙিন আলোয় আলোকিত করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আবারও রাজশাহী মহানগরীকে নিজের মতো করে পরিচ্ছন্নতায় গড়ে তুলতে মাঠে নেমেছেন তিনি। নিয়েছেন মাসব্যাপী কর্মসূচী। রাজশাহীতে আবারও সবুজ পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন মেয়র লিটন। শুধু নগর পরিষ্কার নয়, নানা উন্নয়ন কর্মকা-ও শুরু করেছেন তিনি। বিএনপির মেয়র থাকাকালীন শহরের যেসব রাস্তাঘাট সংস্কারের অভাবে পড়েছিল সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করতে শুরু করেছে মেয়র লিটনের ছোঁয়ায়। রাজশাহী নগর ভবনেও ফিরে এসেছে কাজের গতি। এখন সেখানে কোলাহল সব সময়। নাগরিকরা যে কোন সময় যে কোন সেবা পাচ্ছেন অনায়াসে। রাজশাহী নগরীর ফুটপাথ দখলমুক্তকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বিনামূল্যে ডাস্টবিন বিতরণ, উপযুক্ত স্থানে আবর্জনা ফেলার বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীসহ নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশে মাঠে রয়েছেন মেয়র। কখনও হেঁটে হেঁটে ঘুরে ফিরছেন নগর। কখনও নিজে অটোরিক্সা চালিয়ে ঘুরছেন। যেখানেই অপরিচ্ছন্নতা সেখান থেকেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিজস্ব ওয়াকিটকির মাধ্যমে ডেকে নিয়ে পরিষ্কার করাচ্ছেন। নিজেও নিয়মিতভাবেই নগরীর বিভিন্ন জায়গায় চালাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ফুটপাথ, বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিনামূল্যে ডাস্টবিন বিতরণের পাশাপাশি মানুষকে উপযুক্ত স্থানে ময়লা ফেলতে উদ্বুদ্ধ করছেন মেয়র লিটন। এছাড়াও নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কাজ করে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও কর্মীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের ডাকে ছুটে যাচ্ছেন। নগর পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণকারীদের জানাচ্ছেন অভিবাদন। এরই মধ্যে সাড়াও মিলেছে। এখন আবারও পরিচ্ছন্নতায় দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে নগরী। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী চষে বেড়াচ্ছেন লিটন। মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের মতামত নিয়ে রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। মেয়রের নেতৃত্বে রাসিকের সব কাউন্সিলও নিজ নিজ ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছেন। নগরীর দোকানদার ও ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন করে লিফলেট ও প্রতিটি দোকানে একটি করে ডাস্টবিন বিতরণ করছেন। নগরীর ফুটপাথ দলখমুক্ত রাখার এ কার্যক্রমটি সফল করতে মহানগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র। নিয়মিতভাবে ফেসবুকে জনগণের মতামত গ্রহণ করে এবার রাজশাহী গড়ার কাজে মনোযোগী লিটন। নগরীর সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করার বিষয়ে সতর্ক করে সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালকদের সতর্ক করছেন নিজে। এছাড়াও রাস্তায় মেরামতের জন্য অবৈধভাবে গাড়ি রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্কশপের মালিকদের নিজ জায়গায় গাড়ি রাখতে অনুরোধ জানান তিনি। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই নগর পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছেন তিনি। ‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ স্লোগানে এগুচ্ছেন লিটন। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শহরকেও ঝকঝকে রাখতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। বিনামূল্যে ডাস্টবিন দেয়া হচ্ছে, ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা সংরক্ষণ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা এসে সেসব ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যাবে। মেয়র বলেন, ফুটপাথে ব্যবসা করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। আমরা তাদের ক্ষতি করতে চাই না। কিন্তু পুরো ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করা যাবে না। নাগরিকদের চলাচলের জায়গা রেখেই ব্যবসা করতে হবে। শুধু নগর পরিচ্ছন্নতা নয়, দায়িত্ব নেয়ার পর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন নগর ভবনের। হাত দিয়েছেন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে পড়ে থাকা রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ শিরইল এলাকা থেকে তালাইমারী সড়কটির সংস্কার কাজও শুরু করেছেন তিনি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অংশিদারিত্বে নির্মাণাধীন বৃহত্তর বাণিজ্যকেন্দ্র দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ দ্রুত নির্মাণ শেষে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, সিটি কর্পোরেশনের আয় বাড়াতে ২০০৯ সালে তিনি মেয়র থাকাকালে শুরু হয়েছিল দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে বাণিজ্যিক বহুতল এই ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে ফল বিপর্যয় হয়। নির্বাচনে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হলে ভবনের নির্মাণ কাজ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। থমকে যায় সিটি কর্পোরেশনের সব উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গত ৫ অক্টোবর দায়িত্বভার গ্রহণের পর সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। এরই মধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছেন দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ করার। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দ্রুত স্বল্প পরিসরে হলেও মার্কেটটি চালু করা সম্ভব হবে। রাজশাহী নগরীর উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র লিটন বলেন, গত ৫ বছরে পিছিয়ে পড়া রাজশাহীকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এক লাখ কর্মসংস্থানের যে প্রতিশ্রুত দিয়েছি, বাস্তবায়ন করব। সেজন্য রাজশাহীতে শিল্পায়ন করা হবে। সবাইকে নিয়ে, সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।
×