ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে বাসা পরিবর্তনেও আধুনিকতার ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজধানীতে বাসা পরিবর্তনেও আধুনিকতার ছোঁয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় একটি ভাড়াবাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন অনিক আহমেদ নামের একজন বেসরকারী চাকরিজীবী। বছরের শুরুতে বাসাভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস, পানির সমস্যার পাশাপাশি মেট্রোরেল নির্মাণে যানজটের সমস্যার কারণে তিনি চলতি মাসের শুরুতেই বাসা পরিবর্তন করে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা চলে আসেন। বাসা পরিবর্তন করা খুবই ঝামেলার কাজ মনে করে তিনি চিন্তায় পড়ে যান। আসবাবপত্র, ফার্নিচারসহ ৫ বছরের সংসারের নানা জিনিস নিয়ে কীভাবে বাসা পরিবর্তন করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। পরে সড়কের পাশের দেয়ালে দেখতে পান বাসা পরিবর্তন করে দেয়ার সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা বিজ্ঞাপন। স্বস্তির দেখা মিলল যেন। সেখান থেকেই ফোন করে তিনি বাসা পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য ট্রাক এবং মানুষ ঠিক করেন। কর্মসংস্থানের সিংহভাগ রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ কাজের সন্ধানে রাজধানীমুখী হচ্ছেন। প্রতিদিনই কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঢাকায় আসছে মানুষ। এক জরিপ মতে, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষই বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট-এ্যাপার্টমেন্ট ও মেসবাড়িতে ভাড়ার বিনিময়ে বসবাস করেন। আর এসব মানুষ নানা সমস্যার কারণে বাসা পরিবর্তনও করেন বিভিন্ন সময়। কিন্তু রাজধানীতে বাসা পরিবর্তন করা একটা জটিল সমস্যা। মানুষের এই সমস্যা এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই গড়ে উঠেছে এলাকাভিত্তিক বাসা পরিবর্তন করে দেয়ার নানা সেবাপ্রতিষ্ঠান। তারা টাকার বিনিময়ে এ সেবা প্রদান করে থাকে। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার এমনই এক প্রতিষ্ঠানের নাম জান্নাত ট্রান্সপোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল আরও বিস্তারিত তথ্য। তিনি জানান, আমাদের এই বাসা পরিবর্তন করে দেয়ার প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য বিজ্ঞাপন আকারে পুরো এলাকার ওয়ালে পোস্টার সেঁটে দিই। যারা বাসা বা অফিস পরিবর্তন করতে চান তারা বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাসা পরিবর্তনে সহায়তা করা আরেক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন বলেন, ‘বাসা পরিবর্তন করার বিষয়ে আমাদের কেউ ফোন করলে আমরা ওই বাসায় গিয়ে আগে দেখে আসি ফার্নিচার, আসবাপত্রসহ আর কী কী জিনিস আছে। এরপর চেঞ্জ করে কোথায় যাবে। কয় তলা থেকে মালামাল নেমে কোন তলায় উঠবে। এসব জানার পর আমরা এলাকা, কোন তলা- এসব বিবেচনা করে একটা চার্জের কথা বলে দিই। এরপর দরদামের মাধ্যমে কত টাকা তা নির্ধারণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘এসব কাজ সাধারণত মাসের শেষ দুই দিন থেকে শুরু করে মাসের ৩/৪ তারিখ পর্যন্ত কাজ বেশি হয়। তবে মাসের যেকোন সময়েও আমরা প্রস্তুত থাকি এই সেবা দিতে। আগে এসব ভাড়াটিয়ারা নিজেরাই লেবার (শ্রমিক) এবং পারাপারের জন্য ট্রাক ঠিক করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাসা পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য এসব সেবাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় মানুষ আমাদের কাছেই আসে। কারণ এক প্রতিষ্ঠানেই সব সেবা পান তারা। তাই দিন দিন এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’ তিনি আরও জানান, ট্রাক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলা থাকে। তারা মাসের অন্য সময় বিভিন্ন কাজ করেন। কিন্তু যখন আমরা এমন ট্রিপ পাই তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা চলে এসে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গিয়ে এসব সেবা দিয়ে আসেন তারা। আর আমরা তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দেই। এমন সেবা নিতে কেমন টাকা খরচ পড়ে-এ বিষয়ে জানাতে গিয়ে মোবারক হোসেন বলেন, ‘ধরেন, মিরপুরের শেওড়াপাড়ার ৬ তলা থেকে একটি ছোট ফ্যামিলি বাসা পরিবর্তন করে উত্তর বাড্ডায় ৪ তলায় একটি বাসা বদলের কাজ পেলাম। তখন ফার্নিচার আর কয় তলা, দূরত্ব এবং ৫-৬ জন শ্রমিক, পরিবহন হিসেবে ট্রাকসহ আমরা বিল করব সাড়ে ৬ হাজার টাকা। দরদামের মাধ্যমে এটা সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। মূলত কত টাকা বিল হবে-এটা নির্ভর করে দূরত্ব, ট্রাক বা পিকআপ কত বড় হবে, কত জন শ্রমিক লাগবে আর কয় তলা থেকে কয় তলায় যাবে এর ওপর। তবে স্বাভাবিকভাবে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৭ পর্যন্ত বিল হয় স্বাভাবিক ছোট-মাঝারি ফ্যামিলির ক্ষেত্রে।’ রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা নূরুন নাহিদ নামের একজন বেসরকারী চাকরিজীবীও কিছুদিন আগে বাসা বদল করে উত্তরায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বসবাসরত ভাড়াটিয়ারা বাচ্চার স্কুল, নিজের বা পরিবার সদস্যদের অফিস, যানজট, বাসার ফ্যাসিলিটি, ভাড়ার তারতম্যসহ নানা কারণে বাসা বদল করেন।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বাসা বদল করা খুবই ঝামেলার কাজ। তবে এসব বাসা বদল করে দেয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় মানুষের খুব সুবিধা হয়েছে। তাদের (সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান) শুধু ফোন করলেই টাকার বিনিময়ে তারাই সব কিছুর ব্যবস্থা করে বাসা বদল করে দেয়।’ তবে এই বেসরকারী চাকরিজীবীর মতে, তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের কিছুটা অভাব রয়েছে। তিনি মনে করেন, পেশাদারিত্বের আচরণ আরেকটু ভাল করে সেবার মান যদি বাড়ানো হয় তাহলে এই সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে রাজধানীতে।
×