ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুদ্ধ চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রনী খসরু চিরনিদ্রায় শায়িত

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 শুদ্ধ চলচ্চিত্র আন্দোলনের  অগ্রনী খসরু চিরনিদ্রায়  শায়িত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৈত্রিকভিটা কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের মোহনপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত সুস্থধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ মুহম্মদ খসরু। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৭২ বছর। এদিন বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয় খসরুর মরদেহ। বুধবার সকালে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনে জন্য তার মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মুহম্মদ খসরুকে তার পৈত্রিকভিটা কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের মোহনপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুহম্মদ খসরু ভালবেসে ছিলেন চলচ্চিত্রশিল্পকে। সেটাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। দেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়ে প্রাধান্য দিয়েছিলেন সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণের আন্দোলনে। চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনায়ও দিয়েছেন মুন্সিয়ানার পরিচয়। গত ২১ জানুয়ারি শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ডায়াবেটিস, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে। হাসপাতালে ভর্তির পর আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। মুহম্মদ খসরু ভারতের হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে নানা বিষয়ে তার পড়ালেখা ছিল অগাধ। কখনও লেখক, কখনও সম্পাদক, আবার কখনও নিপুণভাবে পালন করেছেন দক্ষ সংগঠকের দায়িত্ব। জীবনের বেশির ভাগ সময় নিভৃতচারী হিসেবেই কাটিয়েছেন তিনি। মুহম্মদ খসরু চলচ্চিত্র বিষয়ক কালজয়ী পত্রিকা ‘ধ্রুপদি’ সম্পাদনা করতেন। চলচ্চিত্র মহলে পত্রিকাটি দারুণভাবে সমাদৃত। তার উদ্যোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম স্টাডি সেন্টার। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদের আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ এবং জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে তার অবদান ছিল অসামান্য। ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ‘পালঙ্ক’ ছবিটি নির্মাণের সময় মুহম্মদ খসরু ভারতীয় চলচ্চিত্রকার শ্রী রাজেন তরফদারের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য মুহম্মদ খসরু ‘হীরালাল সেন’ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী পদক’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদ থেকে আজীবন সম্মাননা-২০১৭ প্রদান করা হয় তাকে। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৩ সালে ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মুহম্মদ খসরু। সৎ, শুদ্ধ ও নির্মল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন, সেগুলোর পঠন-পাঠনের মাধ্যমে আস্বাদন, অনুধাবন ও উপলব্ধি করা, আলোচনা-সমালোচনা করা, চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ ও প্রচার, সর্বোপরি সমঝদার ও রুচিশীল দর্শক তৈরির প্রয়াসের যে সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে, গত ৫০ বছর ধরে মুহম্মদ খসরু ধরে রেখেছিলেন সেই ধারাবাহিকতা। ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ গঠনের সময় তার সঙ্গীত ছিলেন আনোয়ারুল হক খান, বাহাউদ্দিন চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, ওয়াহিদুল হক, আবদুস সবুর, সালাহ্উদ্দিন প্রমুখ।
×