ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লালকার্ডে জয়বঞ্চিত হলো মুক্তিযোদ্ধা কেসি

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

লালকার্ডে জয়বঞ্চিত হলো মুক্তিযোদ্ধা কেসি

রুমেল খান ॥ একলাল কার্ডেই বদলে গেল সব দৃশ্যপট। জয়বঞ্চিত হলো দু’বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। ২-২ গোলে ড্র করে তাদের রুখে দিল একবারের লীগ রানার্সআপ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের ঘটনা এটি। তবে ড্র করেও খুশি নয় পুরনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ। কেননা বাগে পেয়েও তারা হারাতে পারেনি ‘দ্য রেডস্’ খ্যাত মুক্তিযোদ্ধাকে। সেক্ষেত্রে জয়বঞ্চিত হলেও ড্র করেও এক পয়েন্ট নিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে মুক্তিযোদ্ধা। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে এটা প্রথম ড্র মুক্তিযোদ্ধার। দুই জয়ে তাদের পয়েন্ট ৭। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান আগের মতোই অষ্টম। পক্ষান্তরে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে এটা ‘আইলো’, ‘ডাইলপট্টি’ ও ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জের চতুর্থ ড্র। এখন কোন ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি তারা। ৪ পয়েন্ট তাদের। ফলে পয়েন্ট টেবিলে অবস্থানের উন্নতি হলো দু’ধাপ, অর্থাৎ একাদশ থেকে নবম। এই ম্যাচে জিততে পারলে জয়ের নায়ক বনে যেতে পারতেন মুক্তির জাপানিজ মিডফিল্ডার ইউসুকে কাতো। কেননা দলের দুই গোলের নেপথ্যে তার অবদান ছিল। কিন্তু তার ভুলের কারণেই দশজনের দলে পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা। ফলে শেষ পর্যন্ত জেতা ম্যাচ ড্র করে কোনক্রমে হার এড়ায় মুক্তিযোদ্ধা। ১৪ মিনিটে ম্যাচে গোল করে এগিয়ে যায় কোচ আব্দুল কাইয়ুম সেন্টুর শিষ্যরা। ইউসুকে কাতুর বাড়িয়ে দেয়া বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে থ্রু পাস দেন সৈয়দ রাকিব খান। বক্সে ঢুকে জটলার মধ্য থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড বাল্লো ফামৌসা (১-০)। এই গোল করে চলতি লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইয়ে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনকে (৫ গোল) পেছনে ফেললেন বাল্লো। ২০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে কাতো উঁচু করে বল পাঠান বাল্লোর উদ্দেশে। বল বুঝে নিয়ে এবারও আগের মতোই জোরালো শটে রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক আরিফুল ইসলামকে পরাস্ত করেন বাল্লো (২-০)। এর মাধ্যমে নিজের গোলসংখ্যাকে ৭-এ উন্নীত করেন বাল্লো। কিন্তু জোড়া গোলে এগিয়ে থাকার চিত্তসুখ বেশিক্ষণ কপালে সয়নি মুক্তিযোদ্ধার। ঘটে যায় সর্বনাশ। যে কাতো দুই গোলের পেছনেই অবদান রেখেছিলেন, তিনিই কিনা মেজাজ হারিয়ে ঘটালেন অঘটন। যার মাসুল দেয় তার দল। ম্যাচের তখন ২৫ মিনিট। অফ দ্য বলে রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার রকিবুল ইসলামের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন কাতো। তখন ম্যাচ চলছিল মাঠের অন্য প্রান্তে। তাই বিষয়টি দৃষ্টি এড়িয়ে যায় রেফারি সুজিত ব্যানার্জীর। পরে সহকারী রেফারির সঙ্গে আলোচনা করে তিনি রকিবুলকে হলুদ কার্ড এবং কাতোকে লালকার্ড দেখান। ফলে দশজনের দলে পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা। তবে সঙ্গে সঙ্গেই এর সুবিধা নিতে পারেনি রহমতগঞ্জ। ফলে প্রথমার্ধে ম্যাচে ফিরতে পারেনি তারা। দশজনের প্রতিপক্ষ পেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে খেলার ধরন পাল্টে ফেলে সুফল কুড়িয়ে নেয় রহমতগঞ্জ। কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর ট্যাকটিস আত্মস্থ করে সেটা বাস্তবে রূপ দেয় তার সুযোগ্য শিষ্যরা। ৫১ মিনিটে বল পেয়ে ডান পায়ের গড়ানো জোরালো শট করেন রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ড সোহেল রানা (১-২)। গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে এ যাত্রা রক্ষা করলেও পরের মিনিটেই গোল হজম করতে হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাকে। মিডফিল্ডার ফয়সাল আহমেদের কর্নার পাঞ্চ করে বল সরিয়ে দেন গোলরক্ষক। বক্সের মাথায় বল পেয়ে যান সোহেল রানা। এর ঠিক দু’মিনিট পর ম্যাচে সমতা আনে রহমতগঞ্জ। ৫৪ মিনিটে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে সোহেল রানার শট বাঁ পোস্টে লেগে ফেরত আসার পর শুয়ে পড়ে হেড নেন ফরোয়ার্ড চৌমরিন রাখাইন, ওই মুহূর্তে মুক্তি ডিফেন্ডার আসিফ হোসেন রিমন গোললাইন থেকে বল বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করলেও বল তার পায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায় (২-২)। ৭৮ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধার সুজন বিশ্বাস বাঁ পায়ে যে তীব্র শটটি নেন তা গোলরক্ষক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্র’তেই মাঠ ছাড়ে উভয় দল। জয়রথ থামলো বসুন্ধরা কিংসের ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে বসুন্ধরা কিংসের জয়রথ থামিয়ে দিয়েছে টিম বিজেএমসি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, ম্যাচে নামার আগে ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত এবং পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন এই বিজেএমসি ছিল পয়েন্ট টেবিলে ১৩ দলের মধ্যে ১২তম অবস্থানে। ঢাকা আবাহনীর মতো শক্তিধর দলকেও যে বসুন্ধরা হেসে খেলে হারিয়ে দিয়েছে, লীগে তারাই কিনা মঙ্গলবার নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে গোলশূন্য (০-০) ড্র করে টিম বিজেএমসির সঙ্গে। গোদের ওপর বিঁষফোঁড়ার মতো এই ম্যাচে বসুন্ধরা একটি লালকার্ডও পেয়েছে। খেলার ৭৭ মিনিটে রেফারি জালালউদ্দিন লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন বসুন্ধরার ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীকে। চলতি লীগে এটিই প্রথম পয়েন্ট হারানোর ম্যাচ ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরার। তারা নেমে গেল দ্বিতীয় অবস্থানে (৬ ম্যাচে ৫ জয়, ১ ড্রতে ১৬ পয়েন্ট)। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ঢাকা আবাহনী আছে এক নম্বরে (১৮ পয়েন্ট)। পক্ষান্তরে ৭ ম্যাচে এটা বিজেএমসির তৃতীয় ড্র (এখনও জয়বঞ্চিত তারা)। ৩ পয়েন্ট নিয়ে একাদশ থেকে নবম স্থানে উঠে আসলো তারা। পেছনে ফেললো ব্রাদার্স এবং নোফেলকে।
×