ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের করদাতাদের আপীল খুলনায়!

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশালের করদাতাদের আপীল খুলনায়!

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কর অঞ্চলের আওতাভুক্ত বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলায় গত অর্থবছরে সর্বকালের সর্বাধিক পরিমাণ প্রায় ৪৩৬ কোটি টাকা আয়কর আদায় করা হয়েছে। যা প্রকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৭ লাখ টাকা বেশি। এই অঙ্কের পরিমাণ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১১৮ কোটি টাকা বেশি আয়কর আদায় হয়েছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের এসব জেলাগুলোতে গত অর্থবছরে টিআইএন ধারী (টিন) করদাতার সংখ্যা এক লাখ ৩১ হাজার ৪৮৩ জনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ৫২৯। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার দুইজন। বরিশালের কর কমিশনার দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরণে উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ অঞ্চলের করদাতাদের সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তুলে ধরেন। প্রতিবছরই দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করদাতা বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে বলে জানিয়েছে এনবিআর কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই ২২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যাকে এনবিআর কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক বলে মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গতবছরের নবেম্বর মাসে বরিশাল কর অঞ্চলের ছয়টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলাতে কর মেলাগুলোতে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ নানা ধরনের সেবা গ্রহণ করেছেন। যা ছিল এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৩ হাজার বেশি। এবার প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ কর মেলাগুলোতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন। আগের বছর ওই সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের মতো। নবেম্বরের মেলাগুলো থেকে কর আদায় হয়েছে আট কোটি ৩৩ লাখ টাকার মতো। যা আগের বছর ছিল ছয় কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এবারের কর মেলাগুলো থেকে এক হাজার ১৬৬ জন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ নতুন ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ করেছেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০১-০২ অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মাধ্যমে। বিগত ১৬ বছরে এ অঞ্চলের ছয়টি জেলায় আয়কর আদায় ২৬০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়কালের প্রতিটি বছরই আয়কর আদায় বাড়ছে। নিয়মিতভাবেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে বরিশাল কর অঞ্চল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ২০৭ কোটি টাকার আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বরিশাল কর অঞ্চল প্রকৃত রাজস্ব আহরণ করা হয় ২১১ কোটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের চেয়ে ৯৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটিতে নির্ধারণ করলেও তা অতিক্রম করে বরিশাল কর অঞ্চল। বরিশাল কর অঞ্চলের ২৩টি সার্কেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আয়কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার কারণেই এ সুফল বয়ে আসছে। তবে বরিশাল কর অঞ্চলে এখনও মঞ্জুরিকৃত জনবলের অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে কাজ করছে। যা চরম বির্বতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এখানে ২৩টি সার্কেল ও চারটি রেঞ্জের অর্ধেক পদই শূন্য থাকছে দীর্ঘসময় ধরে। ফলে এখানে কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ সার্বিক কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে বরিশালে কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের আপীল করার জন্য কর কমিশনার (আপিল) এবং আপীলেট ট্রাইব্যুনাল না থাকায় কর প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এখনও খুলনা ও ঢাকায় যেতে হচ্ছে। যে কারণে করদাতাদের সমস্যা বাড়ছে। আবার একই কারণে কর আদায়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বরিশাল কর অঞ্চলের নিজস্ব ভবন নির্মাণের বিষয়টিও প্রায় এক দশক ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে ঝুলে আছে। ভাড়া বাড়িতেই কর অঞ্চলের বেশিরভাগ সার্কেল অফিস কাজ করছে। শুধুমাত্র বরিশাল মহানগরীতেই কর বিভাগের বাড়িভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসে প্রায় সোয়া দুই লাখ টাকা। এখানে কর ভবন নির্মাণের বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করলেও ভবনের নক্সা প্রণয়ন ও দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া আটকে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
×