ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উচ্ছেদ হয় না দখলদাররা

বগুড়ার করতোয়া নদীকে মানুষই হত্যা করছে

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বগুড়ার করতোয়া নদীকে মানুষই হত্যা করছে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ মানুষই হত্যা করছে বগুড়ার করতোয়া নদীকে। দখল থামছেই না। নদী তীরেই অবস্থিত জেলা প্রশাসকের অফিসের পেছনে অল্প দূরে দখলের পর প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। নদীভূমি ভরাট করে নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে বহুতল ভবন। নিকট অতীতের প্রমত্তা করতোয়া দেখে মনে হবে নগরীর বড় ড্রেন। নোংরা কালো পানি। মানুষ নামতে পারে না। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত। দিনভর ঘুরে বেড়ায় ‘হগ’ প্রাণী। করতোয়ার উৎপত্তি হিমালয় পাদদেশে নেপালের পর্বতমালায়। এরপর অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জের ময়দানহাটার পালশীর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বগুড়া নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে শেরপুরের হলহলিয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদীর দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত শতকের ৮০’র দশকে। বগুড়ার নদী রক্ষায় দখলের প্রতিবাদে টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কয়েকটি সংগঠন। নদী তীরের লোকজন বলেন, প্রভাবশালীরা প্রথমে তীরে বালু মাটি ইট ফেলে দখল করে। তারপর দিনে দিনে এগিয়ে যায় ভেতরে। লোকজন বলে নদীর জীবনের ওপর কোদালের কোপ দেয়া হচ্ছে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে শুরু হয় নির্মাণ যজ্ঞ। নিচে শক্ত কনস্ট্রাকশন (গ্রাউন্ড ব্রেকিং)। দিনে দিনে গড়ে ওঠে বড় স্থাপনা। সাদা চোখেই বলা যায় কিভাবে নদী দখল করা হয়েছে। একের দেখাদেখি আরেক প্রভাবশালী নদীভূমির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে করতোয়া নদীর ওপর গড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, আধুনিক মার্কেট, ইত্যাদি। প্রায় তিন যুগ ধরে অবৈধভাবে নদী দখলের অপতৎপরতা চলছে প্রশাসন ও নদী দেখভালকারী কর্তৃপক্ষের সামনে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মাঠে নামে। তারপর ‘অজ্ঞাত কারণে’ তা থেমে যায়। বলাবলি হয় ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেঁড়ো’। কিছুদিন আগে বগুড়া জেলা প্রশাসন নদী দখলকারীদের একটি তালিকা বানিয়ে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। তারপর থেমে যায়। এ পর্যন্তই থমকে আছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ তো দূরে থাক উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একাধিক সূত্র জানায়, সেটেলমেন্ট অফিসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের সহযোগিতায় দখলদাররা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। এই কাগজপত্র যাচাই করা হয় না। ঢাকায় কেন্দ্রীয় রেকর্ডরুমে ১৯২০ সালের সিএস রেকর্ড এবং ১৯৬২ সালের এম আর রেকর্ডে করতোয়া নদীর মাপজোখ আছে। সেই রেকর্ড দেখে স্পষ্ট করে বলে দেয়া যায় কি পরিমাণ নদীভূমি দখল হয়েছে। তা করা হয় না। করতোয়া তীরে গেলে দেখা যায় কীভাবে দখল হচ্ছে। জহুরুল হক ঘাটের কাছে, এসপি ব্রিজের কাছে, জেলা প্রশাসন অফিস থেকে অল্প দূরে, মালতিনগর চানমারি ঘাটের কাছে। নবাববাড়ি সড়কের ধারে একটি মার্কেটের পেছনের দিকে গেলে দেখা যায় স্থাপনাটির একাংশ নদীর ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। এই মার্কেটের স্বত্বাধিকারী এতটাই শক্তিধর কেউ তার কোন দখলের ওপর হাত দিতে পারে না। গোকুল এলাকায় নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে ইকো পার্ক। বগুড়ার মানুষ হতাশ হয়ে বলেন- প্রমত্তা করতোয়া নদীর অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত বুঝি আর রইল না। ’৮৮ সালে নদীর উজানে গাইবান্ধার চকরহিমপুরে স্লুইস গেট নির্মাণ করে নদীর চলার পথ পরিবর্তন করে দেয়ার ফলাফল ভাল হয়নি। নদী শুকিয়ে দখলদারদের পথ তৈরি হয়েছে।
×