ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস

বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ যে, আমদানি বাড়ার গতি কমে আসায় দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ফিরে এসেছে অনেকটা স্বস্তি। একই সঙ্গে কমেছে বাণিজ্য ঘাটতিও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভারসাম্যে অনেক তফাত। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও ঘাটতির পরিমাণ বেশি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকেই সচেষ্ট। কিন্তু আমদানি নির্ভরতার কারণে রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি হয়ে আসছে। ফলে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না। বাড়ছে ঘাটতির পরিমাণ। সর্বশেষ লেনদেন ভারসাম্যের হাল নাগাদ যে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। হিসাবে এই ছয় মাসে লেনদেনে ভারসাম্য ঘাটতি কমেছে ৬৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ৯৭৮ কোটি ডলারের রেকর্ড ঘাটতি নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তার আগের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। দেখা যাচ্ছে প্রতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। রফতানি ও আমদানিতে ভারসাম্য না থাকায় এই ঘাটতির বৃদ্ধি ঘটছে বলে সহজেই অনুমেয়। দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৬ কোটি ডলার। তবে গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৯৬ দশমিক ৮০ কোটি ডলার। হতে পারে নির্বাচনী বছর বলে আমদানি কম হয়েছে, তাই এই ঘাটতি কমেছে। সাধারণভাবে কোন দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোন ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। আমদানি বাড়ায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেশ বেড়ে গিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চলতি অর্থবছরে আমদানির সেই গতি খানিকটা কমেছে। যে কারণেই বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিও কমেছে। অবশ্য চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক আট শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে দেখা যায় এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। অর্থাৎ ১৩ দশমিক তিন শতাংশ। বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ কমার প্রভাব আমদানি খাতে পড়েছে। গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ২৫ শতাংশের বেশি। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি এত হবে না বলেই ধারণা করছেন অর্থনৈতিক সমীক্ষকরা। গত অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৭৮২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। একই সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে দুই হাজার ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৭৬৬ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্য ঘাটতি কমে ১৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছিল। তবে বিদেশী বিনিয়োগ ও সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের আর্থিক উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এ বছর প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ১৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা আগের বছর ছিল ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। হিসাব-নিকাশে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশকে রফতানি খাতে পণ্য বাড়াতে হবে যেমন, তেমনি নতুন নতুন বাজারও খুঁজতে হবে। মধ্যম আয়ের দেশের যাত্রাপথে সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গাতেই হবে।
×