ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত ফুরিয়ে আসছে তিতাসের গ্যাস ভাণ্ডার

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দ্রুত ফুরিয়ে আসছে তিতাসের গ্যাস ভাণ্ডার

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ॥ জ¦ালানি সম্পদ গ্যাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটির তলদেশে রয়েছে প্রচুর এ গ্যাস ভা-ার। কয়েক যুগ ধরে বিরামহীমভাবে গ্যাস উত্তোলনে এখন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এই প্রাকৃতিক গ্যাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের অধীন গ্যাস ক্ষেত্রের কয়েকটি কূপ বন্ধ রয়েছে। কয়েকটির উৎপাদন কমছে, করছে উঠানামা। সে সঙ্গে মাত্র অতিরিক্ত পানি উঠছে। গ্যাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব আলামত এ সেক্টরের জন্য শুভ নয়। এসব জানান দিচ্ছে মজুদ ফুরানোর কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, বেশিরভাগ কূপের অবস্থাই পাল্টিয়েছে। উৎপাদনের ব্যাপক হেরফের হচ্ছে। অর্ধেকে নেমে এসেছে কূপগুলোর উৎপাদন। তবে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে খনি থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। তারপরও তেমন কাজ হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের অধীনে গত ৬ বছরে ৮টি কূপ খনন করা হয়। এর মধ্যে ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ নং কূপ প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ২৩নং কূপ থেকে ১৫.৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ২৪নং কূপ থেকে ৬.৭ মিলিয়ন গ্যাস, ২৫ নং কূপ থেকে ১৬.৮ মিলিয়ন এবং ২৬নং কূপ থেকে ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। অন্তত ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে এখান থেকে। অন্যদিকে সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের আওতায় তিতাসের ১৯, ২০, ২১, ২২ নং কূপ খনন করা হয়। তিতাসের এসব কূপ থেকে ১৯ নাম্বার থেকে ১৭ মিলিয়ন, ২০নং কূপ থেকে ১০.৫২ মিলিয়ন ঘনফুট, ২১ নং কূপ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ২২নং কূপ থেকে ১১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসসহ ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। এসব কূপ খনন ও প্রসেস প্লান্ট বাবদ খরচ হয় ৯০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রসেস প্লান্ট স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ১শ’ ১২ কোটি টাকা। গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ও খনি থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ৫টি কূপ বিপুল পরিমাণ এ অর্থ ব্যয়ে ওয়ার্কওভারের পাশাপাশি তিতাসের ২১ নাম্বার কূপের ও ওয়ার্কওভার করা হয়। ২১নং কূপ ওয়ার্কওভার করতে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। অন্যদিকে তিতাসের ১৫নং কূপের ওয়ার্কওভার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে তিতাস ১১, ১০, ৫, ৫ ও ১ নং কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করতে এ অর্থ ব্যয় হয়। ওই সময় কূপগুলোর উৎপাদন ছিল ১১নং কূপে ২৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ১০নং কূপে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৫নং কূপে ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ২নং কূপে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ১ নং কূপে ২৩ মিলিলয়ন ঘনফুট গ্যাস। একটি সূত্র জানায়, ওই সময় ৫টি কূপে ওয়ার্কওভার করা হলেও তেমন ফল আসেনি। শুধু ১০নং কূপের উৎপাদন বেড়েছে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকিগুলো অপরিবর্তিত রয়েছে। সূত্র জানায়, খননকৃত প্রতিটি কূপ থেকে গড়ে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে উৎপাদনে। আর ৫ বছরের ব্যবধানে তা কমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। এসব কারণে গ্যাস সেক্টরে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সূত্র জানায়, খনি থেকে গ্যাস আহরণ করতে প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিদিনকার সম্ভাব্য উৎপাদন ও মেয়াদ নির্ধারণ করেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। সেক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে এসব কূপগুলোর বেলায়। এতে সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ অপচয় হয়েছে বলে মনে করছে গ্যাস সংশ্লিষ্টরা। এদিকে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, বাড়ছে পানির পরিমাণ। তিতাসের ১৩, ২২, ৭নং কূপে নানা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ১৩ ও ২২নং কূপে বাড়ছে পানির পরিমাণ। কর্মকর্তারা বলছেন, ৪টি কূপ ওয়ার্কওভারের জন্য প্রক্রিয়া করা হবে। বর্তমানে তিতাসের গ্যাসক্ষেত্র থেকে গড়ে ৫শ’ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর (বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড) বিজিএফসিএল থেকে ৮২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
×