ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘শ্রীলঙ্কার হয়ে এটিই সেরা টেস্ট’

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  ‘শ্রীলঙ্কার হয়ে এটিই সেরা টেস্ট’

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন। সেই সেরাটা এমন এক ম্যাচে তার উইলো থেকে বেরিয়ে এসেছে যে নতুন এক রূপকথাই তৈরি করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। গত কয়েক বছর ধরে চরম সঙ্কটে পড়ে যাওয়া দেশটির ক্রিকেট যেন নতুন করে আলোর নিশানা পেয়েছে কুসল পেরেরার ঐতিহাসিক ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে। আরও অনেক বড় বড় ইনিংস শ্রীলঙ্কার হয়ে অতীতে অনেকেই খেলেছেন, কিন্তু কুসল এই ইনিংসটি খেলে ছাড়িয়ে গেছেন যেন সবাইকে। দশম উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েছেন ১ উইকেটে। ১ উইকেটে জয়ের ম্যাচে দশম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড। কুসল চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এশিয়ান হিসেবে শতক যেমন পেয়েছেন, তেমনি প্রোটিয়া ভূমিতে পরে ব্যাট করে বিজয়ী দলের ক্ষেত্রে টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও খেলেছেন কুসল। এটি তার ক্যারিয়ারেরও সেরা। এমন অনেক রেকর্ডের পাতাই বদলে দিয়েছেন কুসল। এরপর তিনি নিজের প্রতিক্রিয়ায় দাবি করেছেন এই ইনিংসটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ইনিংস। ক্রিজে ৩০৯ মিনিট ছিলেন কুসল। মাত্র ২০০ বল খেলে ১২ চার, ৫ ছক্কায় করেন তিনি ১৫৩ রান। সবচেয়ে বড় বিষয় যখন নবম উইকেটের পতন ঘটে তখনও ডারবান টেস্টে জেতার জন্য ৭৮ রান দূরে শ্রীলঙ্কা। বিশ্ব ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়েই সেই অবিশ্বাস্য কাজটি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাই দ্বিতীয়বারের মতো কোন টেস্ট জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। বিদেশের মাটিতে সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়েছে কুসলের রেকর্ডময় ইনিংসে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ক্লান্ত, জানি না কি বলা উচিত। বিশেষ করে আমি বলব এটি দলগতভাবে দারুণ একটি কাজ। বিশেষত লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা আমাকে খুব ভাল সহায়তা করেছে। আর সে কারণেই আমার নিজের ওপর বিশ্বাস তৈরি হয়।’ কিন্তু দল যে অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে সেটার পেছনে বলতে গেলে একক কীর্তিই পাবেন কুসল। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে আর কেউ হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। একক লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাভূত করেছেন কুসল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু করেছি... আসলে নিজের কাজটাই করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় দলগতভাবেই আমরা জিতেছি। পুরো ইনিংসে জুটিগুলো দারুণ ছিল। সে কারণেই আমরা ৩০৪ রান তাড়া করতে পেরেছি। আপনি শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা একটা জুটিকে এর কৃতিত্ব দিতে পারবেন না। যদি কেউ একটা রানও করে থাকে সেটাও জয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনতে হবে। দলের পুরো একাদশকেই কিন্তু ব্যাট করতে হয়েছে। আমি মনে করি শ্রীলঙ্কার হয়ে এটিই আমার সেরা টেস্ট।’ ৯ উইকেট পতনের পর থেকেই সমস্ত ঝুঁকি নিয়েছেন কুসল। শরীরে বল লাগিয়েছেন, এমনভাবে দৌড়েছেন যেন প্যান্টের ভেতরে পিঁপড়া কামড়েছে, অবিশ্বাস্য ঠা-া মস্তিষ্কে শারীরিক অস্থিরতায় দলকে পাইয়ে দিয়েছেন বিজয়ের ঠিকানা। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের উইকেটগুলোয় যারা শরীরে বলের আঘাত নিতে চায় না, আমার মনে হয় তারা আসলে ব্যাটিংটাও করতে চায় না। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো জায়গায় এটা ছাড়া ব্যাট চালিয়ে যাওয়া একেবারেই সহজ নয়। এই বোলারগুলোর সবাই-ই আসলে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচজন। আপনি জানেন না কোন ধরনের বল তারা আপনার দিকে ছুঁড়বে। তারা আপনাকে কোন ফুরসত দেবে না এবং তারা দারুণ অভিজ্ঞ। আমার মনে হয় এখানে যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি এর মধ্যেই আমি মাথায় রেখেছিলাম যে ৬/৭টা বলের আঘাত আমার শরীরে নিতে হবে। জানি না কতবার আমাকে বল আঘাত করেছে, আসলে আমি গুনে কুলিয়ে উঠতে পারিনি। কারণ এগুলো নিয়ে ভাবলে আপনি এখানে ব্যাট করতে পারবেন না। শ্রীলঙ্কায় সর্বোচ্চ গতি পাবেন আপনি ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। এখানে আপনি পাবেন অধিকাংশই ১৫০ কিলোমিটারের। এদেশে আসার পর যদি কেউ আপনাকে বলে যে গায়ে আঘাত না লাগিয়েই ব্যাট চালাতে পারবে, তাহলে আমি বলব সে মিথ্যুক। আমাদের আসলে এ বিষয়ে কিছুটা সপ্রতিভ হতে হবে। এটাই আমার সঙ্গে ঘটেছে এবং এটাই আসলে ক্রিকেটের আসল কথা।
×