ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণের তথ্য বিভ্রাটে ক্ষতিতে বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণের তথ্য বিভ্রাটে ক্ষতিতে বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোম্পানির শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত হালনাগাদ ঢাকা স্টক একচেঞ্জের তথ্যগত ভুলে লোকসানে পড়েছে বীমা খাতের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স নামের কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। চলতি মাসের কোম্পানিটির প্রকাশিত শেয়ার ধারণের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেশি দেখানোর কারণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল বিনিয়োগকারী। যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে কয়েক লাখ ক্রেতা ছিল সেখানে ঘটছে এখন উল্টো ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে। তবে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, শেয়ার ধারণের প্রথম তথ্য প্রকাশের দুই দিন পরে কোম্পানির পক্ষ থেকে সংশোধনী পাঠানোর পর তা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির দায় নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে নারাজ। জানা গেছে, ২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির গত ১২ ফেব্রুয়ারিতে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য দেখা গেছে, জানুয়ারি মাস শেষে কোম্পানিটির পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারণ ছিল ৩৫.৭১ শতাংশ। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ ৫৪.০৮ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ কমে মাত্র ৮.২১ শতাংশে দাঁড়ায়। আগের মাসে অর্থাৎ জানুুয়ারিতে প্রকাশিত তথ্যানুসারে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ছিল ৩৫.৭১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩৩.৩৬ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ ছিল ৩০.৯৪ শতাংশ। গত ১২ ফেব্রুয়ারিতে এমন তথ্যই ডিএসইর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার মাত্র ১৫ টাকা থেকে টানা ক্রেতাশূন্য অবস্থায় বাড়তে বাড়তে ২৪.২০ টাকায় পৌঁছায়। পরবর্তীতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পক্ষ থেকে নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখানো হয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩৫.৭১ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ আগের তুলনায় উল্টো কমেছে। ৩৩.৩৬ শতাংশ থেকে সেখানে দেখানো হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে .৩০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে। অতএব ভুল তথ্যে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছে। অপরদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ আগের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২৩ শতাংশ। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিকরা শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছেন। মূলত ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্যগত ভুলের শিকার হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন কোম্পানির শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য কোনভাবেই এভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করা উচিত হয়নি। কারণ প্রাতিষ্ঠানিকদের শেয়ার ধারণের অতিরঞ্জিত এই তথ্য অনেক বিনিয়োগকারীই আবেগে প্রশমিত হয়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কিনেছেন। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ডিএসইর তথ্যে ওপর নির্ভর করেই শেয়ার কেনা-বেচা করেন। তাই ডিএসই কোনভাবেই এই দায় এড়াতে পারেন না। গত কয়েকদিনের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত প্রকাশিত হয় বিকেলে। কিন্তু দুপুর দিকে কোম্পানির বড় হাওলায় ক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়। যদিও দিনশেষে কোম্পানিটির ক্রেতাশূন্য অবস্থায় সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়। এই দিনে কোম্পানিটির মোট ৫৮ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আগে থেকেই শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত তথ্য জানতো। তারা আগেই শেয়ার বিক্রি করেছে। কারণ এর আগের তিনদিনই কোম্পানিটির শেয়ারের কোন ক্রেতা ছিল না। অল্প সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করেই সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে। কিন্তু তারা ২৪.২০ টাকা দরে বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি করেছেন। যা চলে গেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। রবিবার লেনদেন শুরুর পরেই শেয়ারটির দর কমেছে। দিনশেষে সেখানে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দর কমেছে ১.২০ টাকা। দিনশেষে কোম্পানিটির সমন্বয় মূল্য দাঁড়ায় ২৩.৫০ টাকা।
×