ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চান শিল্পী সঞ্জয় রায়

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চান শিল্পী সঞ্জয় রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধ্রুপদী আধুনিক বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সঞ্জয় রায় অসুস্থ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকের ১৭/এ, ১৯নং বেডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের নার্স, আয়া আর ডাক্তার ছাড়া দেখাশোনার কেউ নেই। হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হকের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সঙ্গীতশিল্পী সঞ্জয় রায় বলেন আজীবন গান গেয়ে মানুষকে প্রাণিত করার চেষ্টা করেছি। আর্থিক চিন্তা না করে গানের সুর করে প্রহর কাটিয়েছি। আমার সৃষ্টি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে নিয়ে জীবনভিত্তিক মাতৃবন্দনায় চোখের জল ফেলেছেন অনেকে। এমনকি সে গানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কেঁদেছেন। আজ আমি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার আর বইতে পারছি না। আমার বাড়ি চিতলমারি আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আবাল্য স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া, মাত্র দুই কিলোমিটারের ব্যবধান, মাঝে প্রবহমান নদী মধুমতি। আমি আর্থিকভাবে সংস্কৃতিমনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি, যেন আগের মতো গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি আমার অসমাপ্ত কিছু সৃষ্টিশীল কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারি’। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য হচ্ছে এ্যাঙ্কাইলোসিং স্পন্ডালাইটিস। হাতেগোনা ৪/৫টি পদ্ধতি আছে নিরাময়ের। এর মধ্যে যেটি রোগীর শরীরে মানিয়ে যায় তার মাধ্যমে এ রোগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুঠাম দেহ নিয়ে সকল স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়। সঞ্জয়ের প্রায় ছয় বছর আগে এ রোগ ধরা পড়েছে। ২০১৬ সালের জুন থেকে তিনি এর জন্য সব থেকে দামী চিকিৎসাটাই করে আসছিলেন। পনের হাজার টাকা করে মাসে দুইটা ইনজেকশন, মাসিক ত্রিশ হাজার টাকার ইনজেকশনে এক বছর তিনি মোটামুটি ভাল ছিলেন। তার মতো একজন শিল্পীর পক্ষে নিয়মিত মাসে এত টাকা খরচ করা অসম্ভব। তাই তিনি অন্য এক ডাক্তারের পরামর্শমতো দু’মাস বাদ দিয়ে আবার দু’মাস ইনজেকশন নিচ্ছিলেন, যা এই ওষুধের চরিত্রবিরোধী। এক বছর এভাবে ভাল চললেও এক সময় এ ওষুধটাও তার শরীরে আর কাজ করছিল না, তাই গত ৬ মাস আগেও চরম খারাপ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। নানা কৌশলে কিছুদিন ভাল থাকলেও মাসখানেক হলো আবার চরম থেকে চরমে উঠেছে। আশার কথা হলো এর মধ্যে আর একটু বেশি খরচের নতুন ইনজেকশন বের হয়েছে। পরীক্ষা করে ডাক্তাররা নিশ্চিত এটার নিয়মিত ব্যবহারে আবার পুরোপুরি সুস্থ থাকবেন সঞ্জয় রায়। সঞ্জয় রায় আমজনতার শিল্পী নয়। তথাকথিত প্রতিষ্ঠা পেতে চাননি কখনও। সুর করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। তিনি রবীন্দ্র-নজরুলের পাশাপাশি বাংলা গানের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে নিজে ধারণ করেছেন এবং ধ্রুপদী আধুনিক বাংলা গানকে নতুন প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। শচীন দেব বর্মনের সব বাংলা গানই তিনি কণ্ঠে তুলেছেন এবং শ্রোতাদের শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে তার গবেষণা-সঞ্চালনার অনুষ্ঠান ‘ফিরে চলো আপন ঘরে’ এবং বাংলাদেশ বেতারে ‘মনে রেখো মোর গান’ এখন বিদগ্ধ শ্রোতা এবং সকল শিল্পীর কাছে একটা সম্মানের জায়গা করে নিয়েছে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও আনন্দধ্বনিকে চালিয়ে নিতে সঞ্জয় দীর্ঘদিন কা ারির ভূমিকাতে ছিলেন। ওয়াহিদুল হকের হাতে গড়া গীতিছত্র গানের দল তাই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সঞ্জয় টিকিয়ে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশে মিশনারি কাজ হিসেবে কোটালীপাড়ায় ১৩ বছর ধরে গান শেখাচ্ছেন ।
×