ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন শিক্ষা-প্রশিক্ষণে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অনলাইন শিক্ষা-প্রশিক্ষণে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ হলো সঞ্জীবনী শক্তি। স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষকে দক্ষতা উন্নয়নের পরীক্ষিত ও কার্যকর মাধ্যম হলো অনলাইন শিখন- প্রশিক্ষণ (ইউনেস্কো-২০১৮)। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১১৭৯৩৩৯ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫৮৬০৫৯৯ (ব্যানবেইস ২০১৭)। বিশাল এই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট জনগণ অনেক দেশের মোট জনসংখ্যা থেকেও অনেক বেশি। এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৯.৩৬ % হলো তরুণ ও যুবক। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রথমেই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট এই বিশাল জনগণের টেকসই ও গুণগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে বলে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণের পরে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রায় ৫৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ স্থাপন করেছে এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষক প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার শিক্ষকদের মৌলিক ও বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে (ব্যানবেইস ২০১৮)। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রচলিত এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হয়েছে নিয়মিত ‘ফেস টু ফেস’ শিক্ষা পদ্ধতিতে। আশার কথা হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে এটুআই প্রোগ্রাম এর সহযোগিতায় সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা উপকরণ বিস্তরণ প্লাটফর্ম শিক্ষক বাতায়ন প্রায় ৩ লক্ষ শিক্ষককে যুক্ত করেছে। এবং মুক্ত পাঠ নামে অনলাইন প্রশিক্ষণ প্লাটফর্ম ৬-৭ টি অনলাইন কোর্স চালু করেছে। বাংলাদেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ অনলাইনে দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করেছে দেশের প্রথম ডিজিটাল উচ্চ শিক্ষাঙ্গন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’- যঃঃঢ়://সড়ড়প.নফঁ.ধপ.নফ/ প্লাটফর্ম থেকে, ৩ মাসের মাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স ফরম্যাটে ডিজিটাল লার্নিং ডিজাইন নামে কোর্সটি চালু হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে যারা কাজ করতে চান এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে এই কোর্সটি দিকনির্দেশক বা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। পেডাগোজী ও প্রযুক্তির গুণগত সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে কোর্সটি। একাডেমিক ইলার্নিং এ ইন্টারনেট একটি বড় উপাদান। দেশে সকল শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট কেনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সমাধানে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট পোর্টালটিকে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রক্রিয়ার আওতায় আনাতে হবে। যে কোন প্রক্রিয়ায় এটি হতে পারে, যেমন শুধু টেলিটক সিম থেকে এই পোর্টাল ব্যবহার ইন্টারনেট ফ্রি করে দেয়া যেতে পারে। বা শিক্ষা সিম নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে একটি সেবা প্রক্রিয়া চালু করা যেতে পারে। এই উদ্যোগটি নতুন দশটি প্রতিষ্ঠান তৈরির বেশি সুফল বয়ে আনবে বলে প্রযুক্তিবিদগণ মনে করেন। আর এটি সম্ভব হলে ইলার্নিং এর জন্য এটি হবে অনেক দেশে অনেক বড় একটি অর্জন। এর ফলে একদিকে যেমন টেলিটকের ইন্টারনেট ইউজার যেমন বাড়বে তেমনি ইলার্নিং এ সবার প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত হবে। জাতীয়ভাবে অনলাইন প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য দেশের কাক্সিক্ষত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করার লক্ষ্যে ন্যাশনাল আইডি বা জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ করে একটি ন্যাশনাল ইমেইল আইডি তৈরি করা যেতে পারে। কারণ, বর্তমানে ইমেইল ব্যবহারকারীর নব্বই শতাংশেরও অধিক একাধিক ইমেইল আইডি ব্যবহার করে বলে পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় (বিআইটিএফ সার্ভে ২০১৮)। তরণদের দক্ষতা উন্নয়নে ই-প্রশিক্ষণে প্রধান যেই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো- জ্ঞানমূলক বিষয়গুলো প্রশিক্ষণার্থী তার মোবাইল এর মাধ্যমে শিখতে পারবে। কিন্তু ব্যবহারিক কাজ করা ও প্রজেক্ট জমা দেয়ার জন্য কম্পিউটার প্রয়োজন হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সহায়ক শক্তি দেশের রয়েছে। দেশের প্রায় চার হাজার ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। অনলাইনে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যদি প্রশিক্ষণার্থীর ব্যক্তিগত কম্পিউটার নাও থাকে, তাহলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এখান থেকে কম্পিউটার সাপোর্ট নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবে। আবার দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে এগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হলে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করে প্রজেক্ট জমা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত হারে স্বল্প ফি নিয়ে বা সরকারী সহায়তা নিয়ে এই ল্যাব সমৃদ্ধ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা যেতে পারে। সর্বোপরি দেশে ইলার্নিং বাস্তবায়নে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী সংস্থার কাজ দৃশমান হতে শুরু করেছে। এখন প্রয়োজন অভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের জাতীয় সমন্বয়, কেননা প্রযুক্তি ও পেডাগোজীর সমন্বয় ছাড়া এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব। এটি সমন্বয় করা সম্ভব হলেই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি তরুণ হয়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে। যাদের হাত ধরে গড়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। লেখক : অনলাইন কোর্স সমন্বয়কারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি
×